‘অন্তর্বর্তী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ভুল নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে’

 


আগের সরকারগুলোর মত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ভুল নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এই সরকার সকল জাতিগোষ্ঠী-সম্প্রদায়কে তার তথাকথিত অন্তর্ভূক্তিমূলক ব্যবস্থায় আনতে সক্ষম হয়নি। যার কারণে আদিবাসীদের দুর্দশা, তাদের বঞ্চনা এখনো শেষ হয়নি উপরন্তু আরও বেড়েই চলেছে।

আজ মঙ্গলবার (২০ মে) পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটির জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার।

সভায় ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এই সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনও আন্তরিকতা দেখতে পাইনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান রেখে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করতে এই চুক্তির বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

পিসিপি’র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আজ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ৩৬ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। চেতনার অন্ধকারকে তাড়িয়ে সংগ্রামের আলো হাতে নিয়ে জুম্ম ছাত্র সমাজকে হাঁটতে হবে। শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে এম এন লারমারা যেভাবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিল আজকের পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কর্মীদেরও সেভাবে গ্রামে ফিরতে হবে, শেকড়ের কাছে যেতে হবে। ছাত্র যুব সমাজ তথা গণমানুষকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম 'ক' অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, ছাত্র ও যুব সমাজ হলেন আমাদের আলো, আমাদের পথের দিশারি। জনগণের আন্দোলনে এই অগ্রণী ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। একমাত্র শিক্ষিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণই জনগণের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সমগ্র দেশ যখন ক্রান্তিকাল পার করছে আজকে সেই সময়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ৩৬ বছরে পদার্পণ করলো। ৩৬ বছরের পথচলায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বহু ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করেছে যা ছাত্র সমাজের সংগ্রামী চেতনাকে আরও শাণিত করেছে। আজকে ছাত্র সমাজকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উত্থানের ইতিহাস এবং তার প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করতে হবে।

সংগঠনটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সৈসানু মারমা।

এরআগে, সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ঊষাতন তালুকদার। এসময় গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের মধ্যে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

আলোচনা সভার শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা নিজেদের জীবন আত্মোৎসর্গ করেছেন তাঁদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

‘কারাগারে মারা যাওয়া বম যুবক তথ্য-প্রমাণহীন অভিযোগে আটক ছিলেন’

 


চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগার হেফাজতে বম যুবক লাল থ্লেং কিমের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস কমিশন (সিএইচটিসি)। সোমবার (১৯ মে), সিএইচটিসি’র তিন কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, এলসা স্টামাটোপোলো ও মিরনা কানিংহাম কেইন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়। একইসাথে বম জনগোষ্ঠীর উপর পরিকল্পিত নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কারাগার হেফাজতে ২৯ বছরের বম যুবক লাল থ্লেং কিমের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পেরে ইন্টারন্যাশনাল চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস কমিশন গভীরভাবে মর্মাহত এবং দুঃখিত। লাল থ্লেং কিমকে গত ৭ এপ্রিল ২০২৪ বান্দরবানের রুমার বেথেল পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি, ত্রিশ জন নারী ও তিন জন শিশু (এক ও দুই বছর বয়সী) সহ ১২৬ জন বম ব্যক্তির মধ্যে ছিলেন, যারা তথ্য-প্রমাণহীন অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই এক বছরের অধিক সময় ধরে আটক ছিলেন। যাতে স্বচ্ছতা ও আইনগত সত্যতা প্রতিপাদনের অভাব রয়েছে।

সিএইচটিসি জানায়, আজ দুই বছরের অধিক সময় ধরে মাত্র ১২ হাজারের অধিক জনসংখ্যা নিয়ে বম জনগোষ্ঠী পরিকল্পিত মানবাধিকার লংঘন, সামরিক ব্যবস্থার কারণে জাতিগত নির্মূলীকরণের ঝুঁকি, সামরিক বাহিনীর পক্ষের সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক হামলা, এবং গণগ্রেপ্তারের সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিকল্পিত নিপীড়ন তাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

সমগ্র বম জাতির এক চতুর্থাংশ ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যে আশ্রয় চাইতে বাধ্য হয়েছে। যেখানে তারা চরম অনিশ্চয়তা ও অমানবিক অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। অপরদিকে অবশিষ্টরা চলাচল, কৃষিব্যবসা ও জীবিকার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে, যা সমগ্র সম্প্রদায়কে একটি দুর্ভিক্ষাবস্থার দিতে যেতে বাধ্য করেছে।

বিবৃতিতে কমিশন কেএনএফের সাথে যুক্ত নয় এমন সকল নিরীহ বম বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত সামরিক শাসন অবসান ও পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া সহ চার দফা সুপারিশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।

সামুয়েল রাকসাম: দেশের ফুটবলের উঠতি প্রতিভা

 


সামুয়েল রাকসাম। একটি নাম, যা আজ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অসামান্য অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মিডফিল্ডে তার বল কন্ট্রোল, পজিশনিং এবং বল বিতরণের দক্ষতা দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। হাজারো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও কমেন্টে ফুটে উঠেছে তার প্রতিভার স্বীকৃতি।

ফুটবলে মাঝমাঠ হচ্ছে মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, যেখান থেকে খেলার গতি নির্ধারিত হয়। আক্রমন গড়ে ওঠে, আবার রক্ষণেও সহায়তা আসে। একজন দক্ষ মিডফিল্ডার পুরো দলের ভারসাম্য রক্ষা করেন। সেই দিক থেকে সামুয়েলের জায়গা এখন শুধু দলের ভেতর নয়, দেশের ফুটবল স্বপ্নে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সঠিক প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে একদিন জাতীয় দলের শক্তিমত্তার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলছে সে। এই পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

সামুয়েলের যাত্রাটা কিন্তু সহজ ছিল না। কোনো আরামদায়ক শৈশব নয়, একেবারে সাধারণ এক গারো পরিবার থেকে উঠে আসা এক সংগ্রামী তরুণ সে। তার বাবা নীলটন থিগিদী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাজদিহি চা বাগানে একজন প্রহরী। মা মেফলা রাকসাম গৃহিণী। সাত ভাইবোনের সংসারে সামুয়েল ছিল সবচেয়ে ছোট। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে উন্নত প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তখন পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

তবে প্রতিভা কখনো লুকিয়ে থাকে না। সময় এলেই নিজ আলোয় উজ্জ্বল হয়। সামুয়েলের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। ভৈরব বাজার ফুটবল একাডেমির কোচ সালেহ ভাইয়ের নিবিড় পরিচর্যায় ফুটবল শিক্ষা পেয়েছে সে। কোচের বিশ্বাস ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায়ই সামুয়েলের প্রতিভা ছড়াতে শুরু করে।

স্থানীয় পর্যায়ে অসামান্য পারফর্মেন্সে দ্যুতি ছড়াতে থাকে সামুয়েল। টানা দুইবার বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিল সে। যদিও প্রথম দুটি সুযোগে তাকে বেশিরভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই থাকতে হয়েছে।

কিন্তু তৃতীয়বার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগটা সে আর হাতছাড়া করেনি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফল আজ সবাই দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠ মাতিয়ে দেওয়া এক উজ্জ্বল তরুণ প্রতিভা।

আজ যখন সারা দেশের ফুটবলভক্তরা সামুয়েলকে নিয়ে উৎসাহের বন্যায় ভাসছে, তখন আমি গর্বে আপ্লুত। কারণ প্রথম সুযোগ পাওয়ার সময় থেকেই ওকে নিয়ে লিখেছিলাম, পাশে ছিলেন কোচ সালেহ ভাই ও আশিষ দিও দাদা। আজ সেই আশার ফুল ফলেছে।

সামুয়েল এখন শুধু ফুলছড়া বা শ্রীমঙ্গলের গর্ব নয়, সারা বাংলাদেশের আশার প্রতীক। তাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। এই দীপ্তিকে জ্বালিয়ে রাখতে হবে; আরও উজ্জ্বলভাবে।

দেশের ফুটবল প্রেমীরা একবাক্যে মানছেন, লেখালেখি করছেন মুর্শেদ-ফয়সালদের পাশাপাশি বর্তমান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের অন্যতম আবিষ্কার সামুয়েল রাকসাম! এই মিডফিল্ডারকে সঠিকভাবে গ্রুম করতে পারলে ভবিষ্যত জাতীয় দলের বড় এক সম্পদ হতে পারেন।

সামুয়েলদের মতো হোমগ্রোউন ট্যালেন্ট ও বয়সভিত্তিক থেকে পরবর্তী ধাপে গিয়ে যেন অবমূল্যায়িত না হয়। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের।

কাঞ্চন মারাক, লেখক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মী। 

প্রথমবারের মত আয়োজিত নজরুল কনসার্টে গাইবে এফ মাইনর

 


দেশে প্রথমবারের মত নজরুল কনসার্ট আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। আগামী ৩০ মে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজিত এই কনসার্টে দেশের প্রথমসারির ৯টি ব্যান্ড দলের সঙ্গে মঞ্চ মাতাবে নারী ব্যান্ড দল এফ মাইনর।

মূলত, কাজী নজরুল ইসলামের উদ্দীপনামূলক ১০টি গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। অ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে কনসার্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এফ মাইনর ছাড়াও অ্যালবামটিতে অংশ নেবে ওয়ারফেজ, সোলস, দলছুট, আর্ক, শিরোনামহীন, ডিফারেন্ট টাচ, এমএনবি, রেবেল, ব্ল্যাক।

কনসার্টে অ্যালবামের ১০টি গান গাওয়ার পাশাপাশি নজরুলের আরও বেশ কয়েকটি উদ্দীপনামূলক গান পরিবেশন করবে ব্যান্ডগুলো। গানের পাশাপাশি থাকবে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি থেকে শুরু করে আরও কিছু আয়োজন।

অ্যালবামটিতে জায়গা পেয়েছে কাজী নজরুল ইসলামেরকারার লৌহ-কবাট, ‘এই শিকলপরা ছল্‌’, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জাগো অনশন-বন্দী’, ‘দুর্গম গিরি, কান্তারমরু’, ‘ ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, ‘বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা’, ‘পরদেশী মেঘএবংজয় হোক জয় হোকগানগুলো। কথা, সুর স্বরলিপির নির্দেশনা মেনেই গানগুলো তৈরি হচ্ছে।

নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী জানান, গত কয়েক মাসে দেশের সব বড় ব্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে ১০টি ব্যান্ডকে নজরুলের উদ্দীপনামূলক গানগুলো রেকর্ড করার দায়িত্ব দিই। ৩০ মে অ্যালবামটি প্রকাশ পাবে, সে উপলক্ষেই এ কনসার্ট। দর্শকেরা বিনা মূল্যে কনসার্টটি উপভোগ করতে পারবেন।

 

 

সাধারণ বমদের সন্ত্রাসী বানিয়ে গ্রেপ্তার হত্যা করা হচ্ছে: পাভেল পার্থ

 


পাহাড়ে সাধারণ বমদের সন্ত্রাসী বানিয়ে গ্রেপ্তার হত্যা করা হচ্ছে, আর আমাদের ঢাকায় এসে বিচার চাইতে হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুথাণের পরে এটি হওয়ার কথা ছিলো না। আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে লেখক গবেষক পাভেল পার্থ এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে লাল থ্লেং কিম বম-এর মৃত্যুর বিচার, নির্দোষ বম নারী শিশুসহ সকলকে মুক্তি এবং চিংমা খেয়াং এর ধর্ষণের পর হত্যার বিচারের দাবিতে সম্মিলিত আদিবাসী ছাত্র সমাজ কর্মসূচির আযোজন করে।

সমাবেশে পাভেল পার্থ বলেন, আমি আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি বান্দরবানের মুনলাই পাড়ার জন্য। যে পাড়া দেশের সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম, যে গ্রামের মানুষরা প্রকৃতির মতো সরল তাদের আজ সন্ত্রাসী বানিয়ে পুরো গ্রামবাসীদের গ্রামছাড়া করেছে। যাদের অনেককে আজ বনে জঙ্গলে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই প্রধান উপদেষ্টা আপনাকে সাজানো সমস্যার সমাধান করতে হবে। কেননা এইসব ঘটনা জুলাই গণহত্যার পরিপন্থি।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, নিরীহ বমদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের দায় যেমন শেখ হাসিনা সরকারের, ঠিক তেমনি কারাগারের ভিতরে চিকিসার অভাবে মৃত্যুর দায়ও এই অন্তর্বতীকালীন সরকারকে নিতেই হবে। এই দেশের আইন যদি নিরপেক্ষভাবে চলে তাহলে প্রশ্ন থাকবে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নিরীহ বমদের বিনা ওয়ারেন্টে, বিনা অপরাধে কীভাবে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদীন জেলে আটকে রাখে।

সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, যে জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদযাত্রায় সবসময় বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে সঙ্গ দিয়েছে তাদের সাথে এই রাষ্ট্র বারংবার বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ৭২ এর সংবিধানে এম এন লারমা নিজের জাতিকে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই রাষ্ট্র তা হতে দেয় নাই। দেশের সরকার পরিবর্তন হয়। কিন্তু আদিবাসীদের সাথে এই রাষ্ট্রের বিমাতাসুলভ আচরণ পরিবর্তন হয় নাই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, আমরা খবর পেয়েছি যে সাধারণ বম আদিবাসীদের সন্ত্রাসী সাজিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটক করে রাখা করা হয়েছে। তারা অনেকেই চিকিসার অভাবে মারা যাচ্ছে, অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই সরকার, এই রাষ্ট্রকে বলতে চাই আপনারা দ্রুত নিরীহ বম আদিবাসীদের নিঃশর্তে ছেড়ে দেন এবং অসুস্থ মানুষদের চিকিসা দেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল ডিএমবির সাধারণ সম্পাদক নুংমংপ্রু মারমা।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, বম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের রুমা উপজেলার আহ্বায়ক রিচার্ড বম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার।

© all rights reserved - Janajatir Kantho