সামুয়েল রাকসাম: দেশের ফুটবলের উঠতি প্রতিভা

 


সামুয়েল রাকসাম। একটি নাম, যা আজ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অসামান্য অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মিডফিল্ডে তার বল কন্ট্রোল, পজিশনিং এবং বল বিতরণের দক্ষতা দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। হাজারো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও কমেন্টে ফুটে উঠেছে তার প্রতিভার স্বীকৃতি।

ফুটবলে মাঝমাঠ হচ্ছে মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, যেখান থেকে খেলার গতি নির্ধারিত হয়। আক্রমন গড়ে ওঠে, আবার রক্ষণেও সহায়তা আসে। একজন দক্ষ মিডফিল্ডার পুরো দলের ভারসাম্য রক্ষা করেন। সেই দিক থেকে সামুয়েলের জায়গা এখন শুধু দলের ভেতর নয়, দেশের ফুটবল স্বপ্নে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সঠিক প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে একদিন জাতীয় দলের শক্তিমত্তার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলছে সে। এই পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

সামুয়েলের যাত্রাটা কিন্তু সহজ ছিল না। কোনো আরামদায়ক শৈশব নয়, একেবারে সাধারণ এক গারো পরিবার থেকে উঠে আসা এক সংগ্রামী তরুণ সে। তার বাবা নীলটন থিগিদী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাজদিহি চা বাগানে একজন প্রহরী। মা মেফলা রাকসাম গৃহিণী। সাত ভাইবোনের সংসারে সামুয়েল ছিল সবচেয়ে ছোট। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে উন্নত প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তখন পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

তবে প্রতিভা কখনো লুকিয়ে থাকে না। সময় এলেই নিজ আলোয় উজ্জ্বল হয়। সামুয়েলের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। ভৈরব বাজার ফুটবল একাডেমির কোচ সালেহ ভাইয়ের নিবিড় পরিচর্যায় ফুটবল শিক্ষা পেয়েছে সে। কোচের বিশ্বাস ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায়ই সামুয়েলের প্রতিভা ছড়াতে শুরু করে।

স্থানীয় পর্যায়ে অসামান্য পারফর্মেন্সে দ্যুতি ছড়াতে থাকে সামুয়েল। টানা দুইবার বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিল সে। যদিও প্রথম দুটি সুযোগে তাকে বেশিরভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই থাকতে হয়েছে।

কিন্তু তৃতীয়বার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগটা সে আর হাতছাড়া করেনি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফল আজ সবাই দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠ মাতিয়ে দেওয়া এক উজ্জ্বল তরুণ প্রতিভা।

আজ যখন সারা দেশের ফুটবলভক্তরা সামুয়েলকে নিয়ে উৎসাহের বন্যায় ভাসছে, তখন আমি গর্বে আপ্লুত। কারণ প্রথম সুযোগ পাওয়ার সময় থেকেই ওকে নিয়ে লিখেছিলাম, পাশে ছিলেন কোচ সালেহ ভাই ও আশিষ দিও দাদা। আজ সেই আশার ফুল ফলেছে।

সামুয়েল এখন শুধু ফুলছড়া বা শ্রীমঙ্গলের গর্ব নয়, সারা বাংলাদেশের আশার প্রতীক। তাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। এই দীপ্তিকে জ্বালিয়ে রাখতে হবে; আরও উজ্জ্বলভাবে।

দেশের ফুটবল প্রেমীরা একবাক্যে মানছেন, লেখালেখি করছেন মুর্শেদ-ফয়সালদের পাশাপাশি বর্তমান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের অন্যতম আবিষ্কার সামুয়েল রাকসাম! এই মিডফিল্ডারকে সঠিকভাবে গ্রুম করতে পারলে ভবিষ্যত জাতীয় দলের বড় এক সম্পদ হতে পারেন।

সামুয়েলদের মতো হোমগ্রোউন ট্যালেন্ট ও বয়সভিত্তিক থেকে পরবর্তী ধাপে গিয়ে যেন অবমূল্যায়িত না হয়। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের।

কাঞ্চন মারাক, লেখক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মী। 

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho