ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

৭ মহাদেশের সর্বোচ্চ ৭ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের অভিযানে প্রবাল বর্মন

 


সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের অভিযানে যাচ্ছেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পর্বতারোহী প্রবাল বর্মন। আগামী সোমবার (২ জুন) আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমাঞ্জারো আরোহণের মধ্য দিয়ে তার এ যাত্রা শুরু হবে।

শনিবার (৩১ মে), রাজধানী ঢাকার পান্থপথের ক্লাউড ব্রিস্ট্রো রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রবাল বর্মন বলেন, চার বছরের লক্ষ্য নিয়ে আমি এই অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। অভিযানের অংশ হিসেবে প্রথমেই যাচ্ছি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো চূড়ায় উঠতে। এ অভিযানে আমার দুই সহযাত্রী চিন্ময় সাহা ও শায়লা শারমিন। 

এর বাইরে তিনি মাউন্ট এভারেস্ট (এশিয়া), অ্যাকোনকাগুয়া (দক্ষিণ আমেরিকা), পুঞ্চাক জায়া (ওশেনিয়া), মাউন্ট এলবুর্জ (ইউরোপ), মাউন্ট ভিনসন (অ্যান্টার্কটিকা) এবং ডেনালি (উত্তর আমেরিকা) পর্বত আরোহন করবেন।

বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে 'সীমাহীন' সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাল বর্মন। এর আগে সাকা হাফং, তাজিংডং, যোগি, জোতলাংসহ দেশের বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান করেছেন তিনি।

এছাড়া প্রবাল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পায়ে হেঁটেছেন, এককভাবে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও আইল্যান্ড পিক অভিযান, বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড় হয়েছেন।

কৃষ্ণ হাজংয়ের চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহ্বান বাহাছাসের

 


নেত্রকোনা দুর্গাপুরের বিজয়পুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ হাজং। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির রোগে ভুগছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানতে পেরেছেন, তাঁর দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষ্ণ হাজং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পরিবারে তার স্ত্রী, এক কন্যা সন্তান এবং বাবা মা আছেন।

অসুস্থ অবস্থায় তিনি কিছুদিন ঢাকায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেন। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা ডায়ালাইসিসের খরচ জোগাতে গিয়ে কৃষ্ণ হাজং এখন প্রায় নিঃস্ব। তাঁর অব্যাহত চিকিৎসার জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু সেই অর্থের সংস্থান করতে পারছেন না তিনি।

অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস করতে না পারায় তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন।

কৃষ্ণ হাজংয়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন (বাহাছাস) আর্থিক সহযোগিতা উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংগঠনটি সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি তাঁর চিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। 

সহায়তা পাঠানোর ঠিকানা-

বিকাশ (পার্সোনাল): ০১৯০৩-০৫৯৬৮৯ (বাঁধন হাজং)

নগদ: ০১৩০৬-২৮৮০৩৯ (দীপা রানী হাজং)

ব্যাংক একাউন্ট:

‎Dutch-Bangla Bank ltd.

‎Account Name: Badhon Hajong

‎Account No: 1911580004592

বাংলাদেশের বক্সিংয়ের তরুণ তুর্কি ইমন তঞ্চঙ্গ্যা

 


বয়স সবেমাত্র কুড়ি। এই বয়সেই শক্তি-সামর্থ্যে পেছনে ফেলেছেন অনেক অভিজ্ঞ বক্সারদের। ক্ষিপ্রতা, হার না মানা মানসিকতা আর দক্ষতায় জানান দিয়ে রাখছেন দেশের ভবিষৎ বক্সিং জগৎতে রাজত্ব করার। তিনি ইমন তঞ্চঙ্গ্যা।

যিনি গত ২৪ মে, এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রমোশন্সের উদ্যোগে আয়োজিত ‘এক্সেল কনটেন্ডার সিরিজ ২.০’ এ অংশ নিয়ে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় তিনি রিং-এ নেমেছিলেন শক্তিশালী ভারতীয় বক্সার চন্দনদীপের বিরুদ্ধে। যিনি এরই মধ্যে খেলেছেন দশের অধিক ম্যাচ। বয়স, শক্তি-সামর্থ্যেও এগিয়ে। তবে ইমনের অদম্য মানসিকতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

মিডলওয়েট ক্যাটাগরিতে বাউটটি ছিল ছয় রাউন্ডের। পুরো বাউটে ইমন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। মিডলওয়েট ক্যাটাগরিতে ছয় রাউন্ডের বাউটটি ছিল  ইভেন্টের সবচেয়ে ফ্ল্যাগশিপ লড়াই। প্রথম রাউন্ড থেকেই যেখানে প্রতিপক্ষের উপর ছড়ি ঘুরান ইমন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তার উপর্যপুরি জবাব, কাট ও পাঞ্চে মাটিতে পড়ে যান চন্দন। তবে হার মানেনি। নিজেকে সামনে নিয়ে পরের দুই রাউন্ডে ভালোভাবেই লড়াই চালিয়ে যান এই ভারতীয় বক্সার।

তবে পুরো বাউটে ইমন ছিলেন ক্ষুরধার। দু-একবার পাল্টা আক্রমণের চাপে পড়লেও মুহূর্তেই সামলে নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর প্রতিষ্ঠা করছিলেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। জমজমাট লড়াইয়ের শেষ রাউন্ডে গিয়ে তার আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে আর পেরে ওঠেননি চন্দন। ইমনের আত্মবিশ্বাস আর টিকেও বক্সিং একডেমিতে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের হর্ষধবনি বলে দিচ্ছিল ম্যাচের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে। ইমন জিতেছেন তিন রেফারির সম্মিলিত রায়ে।

দেশের তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর প্রথম পেশাদার বক্সার তিনি। বান্দরবানের আলীকদমের বুলু কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা ইমন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ। গ্রামের বড় ভাইদের সঙ্গে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলতেন। বঙ্গবন্ধু স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টেও উপজেলা পর্যায়ে সেরা হয়ে জেলা পর্যায়ে খেলেছেন।

ইমনের বড় ভাই প্রণয় তঞ্চঙ্গ্যা বান্দরবান সদরে পড়াশোনা করতেন। একসময় স্কুল বদলে ইমনও চলে যান সেখানে। ভর্তি হন বীর বাহাদুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কলেজে পড়াশোনার সময়ই বক্সিয়ের সাথে পরিচয় হয়। আর সেখান থেকেই এগিয়ে শুরু হয় এগিয়ে চলার গল্প। ধীরে ধীরে বক্সিং হয়ে উঠে তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

২০১৭ সালে বক্সিং ফেডারেশন আয়োজিত জুনিয়র ন্যাশনাল বক্সিং কম্পিটিশনের জন্য বান্দরবানের ৮ জনের দলে সুযোগ পেয়েছিলো সে। জেলা পর্যায়ে সেরা হয়ে তারা পরে বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামে খেলতে যান। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে পৌঁছান জাতীয় পর্যায়ে। এখন স্বপ্ন দেখেন অগ্রজ সুরো কৃষ্ণ চাকমার মতো বক্সিংয়ে নিজেকে অনন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার।

উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা সেই গারো পরিবার

 


শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এফিলিস হাগিদকের পরিবার। গত মঙ্গলবার (২০ মে), রাত সাড়ে দশটার দিকে সিএনজি অটোরিকশায় কাজ শেষে এফিলিস স্থানীয় আরও তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে গজনী এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা বন্য হাতির দল তাদের সামনে পড়ে।

এসময় সাথের তিনজন দৌঁড়ে পালিয়ে গেলেও এফিলিস হাগিদক পালাতে পারেননি। এসময় একটি হাতি তাকে শুড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় দিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নিহত এফিলিস হাগিদক ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবার।

নিহত এফিলিস হাদিগক (৪৫) বড় গজনি অবকাশ কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর উপার্জনেই চলত স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার।

এফিলিসের স্ত্রী প্রীতিনাস হাদিমা বলেন, ‘দিনমজুরির কাজ করে যে টাকা-পয়সা পেত, তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলত। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে চলবো? সংসারইবা কীভাবে চলবে? ছেলেমেয়ের লেখাপড়া খরচ কীভাবে জোগাড় হবে?’

কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।

বন বিভাগের গজনি বিট কর্মকর্তা মো. সালেহিন নেওয়াজ জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই নিহতের পরিবারকে তিন লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হবে।

শিক্ষক নিয়োগে বাতিল হচ্ছে ৩০ শতাংশ নারী কোটা

 


বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে ৩০ শতাংশ নারী কোটা বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে এখনও প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এটি হতে পারে।

এর আগে, কর্তৃপক্ষের এক সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মো. হেলালুজ্জামান সরকার বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা-সংক্রান্ত ফাইল ওপরে তোলা হয়েছে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কোনো কারণে চলতি সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ধরনের কোটা বাতিল করে শুধু ৭ শতাংশ কোটা বহাল রাখা হয়েছে। সেই ৭ শতাংশ কোটার আওতায় এনটিআরসিএর মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

১৯৯৯ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে ৩০ শতাংশ নারী কোটা চালু করা হয়। তবে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এটি বাধ্যতামূলক করে। পরে অনগ্রসর অঞ্চলে নারী প্রার্থীর স্বল্পতা দেখা দিলে ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গোপালগঞ্জসহ কিছু জেলা ও উপজেলায় নারী কোটা শিথিল করে।

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে সরকার নবম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা রেখে বাকি পদে মেধাভিত্তিক নিয়োগের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। বর্তমানে ৭ শতাংশ কোটার মধ্যে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, আদিবাসীদের জন্য ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ।

৪৩তম বিসিএস: গেজেটভুক্ত হলেন গারো জনগোষ্ঠীর সানি চাম্বুগং

 


অবশেষে গেজেটভুক্ত হলেন ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও বাদ পড়া ১৬২ জন প্রার্থী। মঙ্গলবার তাদের নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এতে গারো জনগোষ্ঠীর সানি সুবল চাম্বুগং শিক্ষা ক্যাডারে (ব্যবস্থাপনা) নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। ছাত্রজীবনে তিনি গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এরআগে, গারো জনগোষ্ঠীর মেধাবী এই শিক্ষার্থী ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার (ভূমি অফিসার), ৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার (জুনিয়র-ইন্সট্রাকটর) পদে চাকুরি পেয়েছিলেন।

গেজেটভুক্ত হওয়ার পর সানি সুবল চাম্বুগং নিজের অনুভূক্তি ব্যক্ত করে ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘Twist, Thrilled Life goes.’  

৪৩তম বিসিএসে গেজেটভুক্ত হওয়ায় বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষী সহ অনেকেই তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু), বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) তাদের নিজস্ব ফেইসবুক পেজে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি গারো জনগোষ্ঠীর কাছে গর্বের ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।

সামুয়েল রাকসাম: দেশের ফুটবলের উঠতি প্রতিভা

 


সামুয়েল রাকসাম। একটি নাম, যা আজ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অসামান্য অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মিডফিল্ডে তার বল কন্ট্রোল, পজিশনিং এবং বল বিতরণের দক্ষতা দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। হাজারো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও কমেন্টে ফুটে উঠেছে তার প্রতিভার স্বীকৃতি।

ফুটবলে মাঝমাঠ হচ্ছে মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, যেখান থেকে খেলার গতি নির্ধারিত হয়। আক্রমন গড়ে ওঠে, আবার রক্ষণেও সহায়তা আসে। একজন দক্ষ মিডফিল্ডার পুরো দলের ভারসাম্য রক্ষা করেন। সেই দিক থেকে সামুয়েলের জায়গা এখন শুধু দলের ভেতর নয়, দেশের ফুটবল স্বপ্নে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সঠিক প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে একদিন জাতীয় দলের শক্তিমত্তার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলছে সে। এই পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

সামুয়েলের যাত্রাটা কিন্তু সহজ ছিল না। কোনো আরামদায়ক শৈশব নয়, একেবারে সাধারণ এক গারো পরিবার থেকে উঠে আসা এক সংগ্রামী তরুণ সে। তার বাবা নীলটন থিগিদী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাজদিহি চা বাগানে একজন প্রহরী। মা মেফলা রাকসাম গৃহিণী। সাত ভাইবোনের সংসারে সামুয়েল ছিল সবচেয়ে ছোট। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে উন্নত প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তখন পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

তবে প্রতিভা কখনো লুকিয়ে থাকে না। সময় এলেই নিজ আলোয় উজ্জ্বল হয়। সামুয়েলের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। ভৈরব বাজার ফুটবল একাডেমির কোচ সালেহ ভাইয়ের নিবিড় পরিচর্যায় ফুটবল শিক্ষা পেয়েছে সে। কোচের বিশ্বাস ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায়ই সামুয়েলের প্রতিভা ছড়াতে শুরু করে।

স্থানীয় পর্যায়ে অসামান্য পারফর্মেন্সে দ্যুতি ছড়াতে থাকে সামুয়েল। টানা দুইবার বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিল সে। যদিও প্রথম দুটি সুযোগে তাকে বেশিরভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই থাকতে হয়েছে।

কিন্তু তৃতীয়বার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগটা সে আর হাতছাড়া করেনি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফল আজ সবাই দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠ মাতিয়ে দেওয়া এক উজ্জ্বল তরুণ প্রতিভা।

আজ যখন সারা দেশের ফুটবলভক্তরা সামুয়েলকে নিয়ে উৎসাহের বন্যায় ভাসছে, তখন আমি গর্বে আপ্লুত। কারণ প্রথম সুযোগ পাওয়ার সময় থেকেই ওকে নিয়ে লিখেছিলাম, পাশে ছিলেন কোচ সালেহ ভাই ও আশিষ দিও দাদা। আজ সেই আশার ফুল ফলেছে।

সামুয়েল এখন শুধু ফুলছড়া বা শ্রীমঙ্গলের গর্ব নয়, সারা বাংলাদেশের আশার প্রতীক। তাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। এই দীপ্তিকে জ্বালিয়ে রাখতে হবে; আরও উজ্জ্বলভাবে।

দেশের ফুটবল প্রেমীরা একবাক্যে মানছেন, লেখালেখি করছেন মুর্শেদ-ফয়সালদের পাশাপাশি বর্তমান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের অন্যতম আবিষ্কার সামুয়েল রাকসাম! এই মিডফিল্ডারকে সঠিকভাবে গ্রুম করতে পারলে ভবিষ্যত জাতীয় দলের বড় এক সম্পদ হতে পারেন।

সামুয়েলদের মতো হোমগ্রোউন ট্যালেন্ট ও বয়সভিত্তিক থেকে পরবর্তী ধাপে গিয়ে যেন অবমূল্যায়িত না হয়। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের।

কাঞ্চন মারাক, লেখক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মী। 

শতবর্ষের আলোকচিত্রে বান্দরবানের ইতিহাস


দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার হলেন মিতা তঞ্চঙ্গ্যা

 


দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাহাড়ের মেয়ে মিতা তঞ্চঙ্গ্যা। দেশে এ পদে তিনি হবেন বন অধিদপ্তরের প্রথম নারী কর্মকর্তা। বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের বঙ্গপাড়ার গুণধর তঞ্চঙ্গ্যার মেয়ে তিনি। আজকের পত্রিকা।  

পরিবারে পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় বোন সহকারী শিক্ষক এবং অন্য ভাইয়েরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। মা ছিলেন গৃহিণী।

মিতা রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার তাইতংপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর এফএসটিআইয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০২৩ সালের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেন। সেই বছরের জুন মাসে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ফরেস্ট ডিপ্লোমায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

তিনি চট্টগ্রামের ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে ২৪তম ব্যাচে ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি বন অধিদপ্তরের ফরেস্টার পদের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

মিতার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার জীবন এত সহজ ছিল না। তাঁর সঙ্গে ছিল না কোনো মেয়ে সহপাঠী। ছেলেদের সঙ্গে কাটাতে হয়েছে প্রায় পুরো শিক্ষাজীবন। মিতা বলেছেন, ‘আমাদের আদিবাসী মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। আমি চাই এই কঠিন পেশায় পাহাড়ের আদিবাসী মেয়েরা আরও এগিয়ে আসুক।

এক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতার বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মিতা। জানিয়েছেন, মেয়েদের শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা। দেখা গেছে ৫ ফুট ২ থেকে ৩ ইঞ্চি থাকার কারণে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভায় উচ্চতার কারণে বাদ পড়ে গেছেন অনেকে। একই কারণে শুধু পাহাড়ি মেয়েরাই নয়, বাঙালি মেয়েরাও বাদ পড়ে গেছেন। বিষয়টি শিথিল করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মিতা।

বুনো হাতির ভেঙে ফেলা অর্ধেক ঘরের পুরোটা ধসিয়ে দিল বন্যা

 


জুলাই মাসের ৩ তারিখে খাবারের সন্ধানে সিন্ধু ডালুর বাড়িতে হামলে পড়েছিল একদল ক্ষুধার্ত বুনো হাতির পাল। উঠোনে আশেপাশে কিছু না পেয়ে ঘরে আক্রমন চালায় তারা। ভেঙে ফেলে মাটির দালান ঘরের একপাশ। সেই ভাঙা বাড়িতেই এতদিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। চরম আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পারেননি মেরামত করতে।

সিন্ধু ডালু পেশায় একজন পাথর শ্রমিক। তাঁর বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির সীমান্তঘেঁষা নাকুগাঁও গ্রামে। যেখানে স্থলবন্দর করা হয়েছে। এই স্থলবন্দরে একসময় ডালু, মান্দি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল বেশি। কিন্তু সরকারের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে সেখানকার আদিবাসীরা সরে যেতে বাধ্য হয়।

তারপরও প্রায় ২০টির মত ডালু পরিবার পূর্বপুরুষের ভূমি আকড়ে থেকে যায়। এই থেকে যাওয়াদের একজন সিন্ধু ডালু। তাঁর বাড়িটা স্থলবন্দর চেকপোস্টের ঠিক ওপারে। বাইরের যে কেউ চাইলেই খেয়াল খুশিমত সেখানে যেতে পারেন না। বিজিবির অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

পঞ্চান্ন বছর বয়সী সিন্ধু ডালু স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার শ্রমিক। কখনো কখনো ট্রাকে পাথর লোডের কাজটিও তাকে করতে হয়। জীবিকার জন্য যখন যা করার তাই করা লাগে।

সীমিত আয়ে এতদিন বুনো হাতির ভেঙে ফেলা ঘর মেরামত করা যাচ্ছিল না। এবার পাহাড়ি ঢল সেই ভাঙা ঘর একেবারে ধসিয়ে দিয়ে গেল। বন্যায় তাঁর বাড়িতে বুক সমান পানি উঠেছিল। সেই পানি মাটির দালান ঘর ধসিয়ে দিয়ে গেছে।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ১০ ফিট বাই ১০ ফিট সমান ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটাচ্ছেন। বৃষ্টি পড়লেই পানি গড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে টিন ম্যানেজ করেছেন। সেই টিন আনতে গিয়েও পা কেটে গিয়েছে সিন্ধু ডালুর। ১২টা সেলাই লেগেছে। কাটা পা নিয়ে এখন আর বাইরে কাজেও যেতে পারেন না। বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ।

সিন্ধু ডালুর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তখনও জ্বরে আক্রান্ত তিনি। খুব বেশি কথা বলছিলেন না। যা জানতে চাইছিলাম শুধু তার উত্তর করছিলেন। জ্বরের কারণে নাকি দুঃশ্চিন্তায় তা বুঝতে বাকি রইলো না।  

বন্যার পর অনেক জায়গায় অনেক সংগঠন, ফাউন্ডেশন ত্রাণ নিয়ে গেছে। কিন্তু নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আদিবাসীরা ত্রাণ পায়নি। হয়তো কেউ জানেই না স্থলবন্দরে এখনো আদিবাসীরা বসবাস করে! 

অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখি, সিন্ধু ডালুর আকাশে জমেছে শ্রাবনের মেঘ। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে সংসার চালাবেন সেই দুঃশ্চিন্তায় চোখেমুখে দেখছেন অন্ধকার। গারো, কোচ কিংবা হাজংদের নিয়ে টুকটাক বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে, কিন্তু সিন্ধু ডালুদের নিয়ে? তারা তো সংখ্যালুঘুর মধ্যে আরও সংখ্যালঘু! তাদের নিয়ে কেউ ভাবছি কি?

 

কাঞ্চন মারাক, নালিতাবাড়ি, শেরপুর থেকে।

আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস পেলেন হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং

 


দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আসামান্য অবদান রাখায় ‘আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস সম্মাননা পেয়েছেন খিয়াং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ সম্মাননা গ্রহণ করেন।

সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা পালনকারী দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা সংগ্রামী নারীদের সম্মাননায় এই অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪২ জন নারী এই স্বীকৃতি পেয়েছেন।

হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং রাঙামাটি ও বান্দরবানের সুবিধাবঞ্চিত খেয়াং নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করেছেন। এই নারীরা এখন তাদের পরিবার চালানোর পাশাপাশি ভাইবোনদের পড়াশুনা করাচ্ছেন।

গুঙ্গুরু পাড়া আদিবাসী নারী উন্নয়ন সংস্থার সাবেক চেয়ারপারসন এবং বর্তমান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেকের বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন, কৃষিকাজের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং ছাড়াও অ্যাওয়ার্ডসের ৭ম আসরে সম্মাননা পাওয়া বাকি চারজন মহীয়সী নারীরা হলেন— রাজশাহীর মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, যশোরের নাসিমা আক্তার, কক্সবাজারের টিটু পাল, সাতক্ষীরার আলপনা রানী মিস্ত্রি।

ম্রো জাতির প্রথম নারী ডাক্তার সংচাং ম্রো

 


শৈশবে বোনকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেখে স্বপ্ন দেখেছিলেন চিকিৎসক হওয়ার। বিনা চিকিৎসায় পরিবার ও নিজের জনগোষ্ঠীর লোকদের মারা যাওয়ার কারণে তার বাবা কাইংপ্রে ম্রো মনস্থির করেছিলেন সন্তানদের একজনকে চিকিৎসক বানানোর। বাবার দীর্ঘ প্রচেষ্টা, অদম্য মনোবল আর অন্যান্যদের সহযোগিতায় পাহাড়সম বাঁধা পেরিয়ে অবশেষ পূরণ হল সেই স্বপ্ন। ডাক্তার হলেন সংচাং ম্রো।  

এর মাধ্যমে ইতিহাসের অংশী হলেন তিনি। হলেন ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার। সংচাং ম্রোর বাড়ি বান্দরবান আলীকদমের পায়া কার্বারী পাড়ায়।

সম্প্রতি রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন সংচাং ম্রো। তিনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ১৭-১৮ সেশনে ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে ডাক্তারি শেষ করে তিনি এই মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নী করছেন।

ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন সংচাং ম্রো। চম্পটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। আলীকদমে বিজ্ঞানের ভালো শিক্ষক না থাকায় ভর্তি হন সেন্ট যোসেফ হাই স্কুল এন্ড কলেজে। সিস্টারদের সহযোগিতায় এখান থেকেই তিনি এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তির সুযোগ পান রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে।

নিজের ডাক্তার হবার গল্প নিয়ে সংচাং ম্রো বলেন, চিকিৎসার অভাবে এক বোনের মৃত্যু ও মায়ের দীর্ঘকালীন অসুস্থতা এবং বাবার প্রেরণা তাকে ডাক্তার হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

আলীকদমের ম্রো সম্প্রদায় হতে তিনিই প্রথম ডাক্তার। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের পরেই ম্রোদের অবস্থান। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ম্রোদের বসবাস বেশি।

সুস্থ জীবন পেতে চায় আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে

আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের আংড়া গ্রামের আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। জন্মের পর থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে এক চোখ হারায় সে। শুধু তাই নয়, কপাল ও চোখ জুড়ে বেরিয়েছে বিশাল একটি টিউমার।

লিংকনের বাবা দিনমজুর কর্নেলিউস বাস্কে জানান, জন্মের সময় আমার ছেলে ভালোই ছিল। দেড় বছর বয়সে বাম চোখে ঘা হয় তার।

চোখ দিয়ে সবসময় পানি পরত। চোখ ফুলে যায়। ব্যথা হওয়ার কারণে শিশু বয়সে লিংকন খুব কান্নাকাটি করত। এক মিশনারী ফাদার তার নিজের অর্থে ডাক্তারের পরামর্শে চোখ অপসারণ করান। পরবর্তীতে এক চোখ নিয়ে ভালোই ছিলো সে। কিন্ত ৪ বছর বয়সে ওই চোখের উপর ও কপালে ছোট-ছোট টিউমার বের হয়।

লিংকনের পরিবার জানায়, গ্রামের স্কুলে লিংকনকে ভর্তি করে দেওয়া হলেও টিউমার হওয়ায় লজ্জায় সে পড়ালেখা বন্ধ করে সর্বক্ষণ বাড়িতে শুয়ে বসে থাকত। টিউমারগুলো অপারেশনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ডাক্তার বলেন, অল্প বয়সে অপারেশন না করে বয়স বেশি হলে ভালো হবে।

এরপর ছেলের বয়স বেশি হলে ২০১৭ সালের দিকে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের খরচে ঢাকায় অপারেশনে টিউমারগুলো কেটে দেয়। কয়েকদিন পর আবার চোখের উপর কপাল জুড়ে টিউমার বের হয়। সংস্থাটির সহায়তায় একই হাসপাতালে পর পর ৪বার অপারেশন করা হয়। তবে ডাক্তার বলেছিলেন পঞ্চম বার অপারেশন করলে নতুন আর টিউমার বের হবে না। কিন্ত পঞ্চম বার অপারেশনের আগে পাঁচবিবি থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশন অফিস বন্ধ করে দেয়।

এরপর টাকার অভাবে আর অপারেশন করানো হয়নি জানিয়ে লিংকন জানান, ছোটবেলা থেকেই কষ্টের জীবনযাপন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থায় রোদে থাকতে পারি না। চোখ সর্বক্ষণ প্রচন্ড ব্যথা করে। বাবা-মা এখন বেঁচে আছেন। তারা খাওয়াচ্ছেন।

লিংকন বাস্কে আরো বলেন, সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি নতুন সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই।

লিংকনের বাবার বিকাশ নম্বর ০১৭৫০-১২৫১৩৯ 

পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাজন–এ আছে ঔষধি গুণ

পাজন রান্না কীভাবে করতে হয়

বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু, সাংক্রান উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম। আর এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার–পাজন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কথিত আছে, এ পাজন তৈরি করতে প্রায় ১০৭ প্রকার পাহাড়ি সবজি লাগে।

তবে সময়ের বিবর্তনে অনেক সবজি বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় বর্তমানে ৩০-৪০ প্রকার সবজি দিয়ে সুস্বাদু খাবার ‘পাজন’ রান্না করা করা হয়। উৎসবে এই ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।

এই পাজন রান্নার ঐতিহ্য কয়েক’শ বছরের। পাহাড়ে বাস করা পাহাড়ি সব সম্প্রদায়ই এটি রান্না করে থাকে। মূলত পাজন শব্দটি চাকমারা ব্যবহার করেন। তবে জাতিভেদে এর নাম রয়েছে আলাদা। মারমা ভাষায় পাজনকে হাং-র বলে, ত্রিপুরা ভাষায় বলে মৈজারবং, চাক ভাষায় কাইনবোং বলে।

অনেকের মতে, পাজন শব্দটি এসেছে বাংলা শব্দ ‘পাঁচন’ থেকে। শব্দগত মিল থাকলেও বাঙালির পাঁচনের সঙ্গে পাজনের পার্থক্য রয়েছে রন্ধনপদ্ধতি ও স্বাদে। পাজনে শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো মাছও ব্যবহার করা হয়। তাই পাজনের স্বাদ একেবারেই আলাদা।   

পাজন রান্নায় বাজারে পাওয়া যায় এমন সবজি ছাড়াও স্বাদ বাড়ায় নানা ধরনের বুনো সবজি, আলু, কন্দ ও ফুল। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ প্রকার বা তারও বেশি সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। হরেক রকমের সবজি মিশ্রণ করার কারণে খাবারটিতে রয়েছে ঔষধিগুণ।

প্রচলন আছে, সাত বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে তৈরি এই পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত থাকা যায়। তাই এটি পাহাড়িদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। 

বাসাবোতে বিনামূল্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইফতার বিতরণ

বাসাবোতে বিনামূল্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইফতার বিতরণ

ভিন্ন ধর্মের হয়েও মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন ইফতারের ব্যবস্থা করে সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের ভিক্ষুরা। এই বিহারটির ভিক্ষুরা প্রতিবছর বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন।

বিহার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যারা এখানে ইফতার নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই দুস্থ নারী। এছাড়া অসহায় রোজাদারসহ রিকশাচালক ও দিনমজুররাও আসেন ইফতার নিতে। মানুষকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে মানুষে-মানুষে বন্ধুত্ব ও প্রীতি বাড়বে। একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্যই এই ইফতার বিতরণের উদ্যোগ।

ইফতার বিতরণের এই উদ্যোগটি ২০১৩ সালে শুরু হয়। মাঝে করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২৩ সাল থেকে ফের চালু হয়।

এবারও পহেলা রোজা থেকেই সম্প্রীতির এই ইফতার কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে ইফতার বিতরণ করা হলেও দুপু্র থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বৌদ্ধ মন্দিরের রান্নাঘর। যেখানে ইফতারির বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।

প্রায় দুইশো মানুষের জন্য মন্দিরটিতে প্রতিদিন ইফতার তৈরী হয়। যা দরিদ্র মুসলমানদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

সময়ের আগেই মন্দিরটির গেটে লাইন ধরেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে তারা ইফতার গ্রহণ করেন। ইফতারে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, আলুরচপ, খেজুর, জিলাপি ও পেয়াজু দেওয়া হয়।

বৌদ্ধ মন্দিরে ইফতার নিতে আসা একজন নারী জানান, আমরা দুঃখ কষ্টের জন্য এখানে-ওখানে কাজকর্ম করি। তারপরও আমাদের ঘরে ঠিকমতো পয়সা আসে না।

আরেক নারী জানান, বাচ্চাদের খাওয়াই, নিজেরাও খাই। খাওয়ার পর উপকার হয়। সওয়াব হয়, আমাদেরও সওয়াব হচ্ছে।

জানা গেছে, এই ইফতারের প্রচলন করেন শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। তাঁর প্রয়াণের পর বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ এই ধারা অব্যাহত রাখে। মূলত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দাতারা এর অর্থের জোগান দেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বেদান্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো বলেন, মানবতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে মুসলিম, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আমরা বিবেচনা করি না। মানুষ হিসেবেই জানি। যারা দুস্থ, গরিব পবিত্র রমজান মাসে তাদের ইফতার দিই।

সবুজবাগে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ২৮ জন আবাসিক বৌদ্ধ ভিক্ষু রয়েছেন। এছাড়াও ২৫০ জন এতিম শিশু বিহারটিতে থেকে পড়াশোনা করছেন। 

ময়মনসিংহে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ইচ্ছা আছে: অরণ্য চিরান

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অরণ্য চিরান

এ বছর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন গারো জাতিসত্তার বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সমাজসেবক অরণ্য চিরান। গত ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

পুরস্কার গ্রহণের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। আদিবাসী লেখক ও সমাজসেবক অরণ্য চিরান ৪৪ বছর বয়সেই সমাজসেবায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদক পেয়েছেন।

পদক পাওয়া নিয়ে দেশের প্রথমসারির একটি গণমাধ্যমকে অরণ্য চিরান বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্র আমাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ায় আমি খুবই খুশি। ত্রিশ বছর ধরে আমি আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছি। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। তাদের নানা সমস্যায় পাশে থেকেছি। তবে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পাবো, এটা ভাবনাতেই ছিল না।’

সমাজসেবায় স্বাধীনতা পদক পাওয়া অরণ্য চিরান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তাদের জন্য আবাসনসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এছাড়া যারা সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে আসেন তাদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ইচ্ছা আছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে অসহায় মানুষ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আবার বাড়িতে ফিরে যাবে।’

অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তিতে ধোবাউড়ার নয়াপাড়া গ্রামের কবি সাহিত্যিক মতেন্দ্র মানখিন বলেন, ‘অরণ্য চিরান একজন ভালো মনের মানুষ। তিনি আমার অসুস্থতার সময় পাশে থেকে সেবা করেছেন। এছাড়া দিঘলবাগ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লুরেন রিছিল, রাজ্জাক চিরান, এটিশন মানকিন প্রমুখকে সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও সহযোগিতা করেছেন। আদিবাসীদের দাবি আদায়ে তিনি সব সময় আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।’

জানা গেছে, গ্রামের বাড়ি ধোবাউড়ার দিঘলবাঘে হলেও অরণ্য চিরান ছোটবেলা থেকেই ময়মনসিংহ শহরে থাকেন। এলাকা থেকে শহরে গেলেও নানা সমস্যায় মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে পাইয়ে দিতে কাজ করেন।

তবে তার পদক পাওয়ার বিষয়টি অনেকেই মানতে পারেননি বলে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় আদিবাসীদের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

© all rights reserved - Janajatir Kantho