জাতীয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জাতীয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরও আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে না’

 


চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরও আদিবাসীসহ নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার পাহাড়িদের অধিকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে না। জুলাই সনদে আদিবাসীদের কথা নেই।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় বক্তারা সব কথা বলেন। মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি এ সভার আয়োজন করে। স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতোর সভাপতিত্বে সদস্য সচিব হিরন মিত্র চাকমা ত্রিজিনাদ চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। কবিতা পাঠ করেন শর্মী চাকমা নিশিহা ত্রিপুরা।

স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন।

সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।

ছাড়া স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ সাইফুর রহমান তপন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা নারীনেত্রী শিরীন হক।  

উচ্ছেদে ‘জিনিসপত্র সরাতেও সময় দেয়া হয়নি’ আদিবাসীদের, এখন আশ্রয় বাঁশঝাড়ে

 


রাজশাহীতে কোল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। উচ্ছেদের পর তারা একটি বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখানেই রাতযাপন করছেন। এসব পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন।

এক্সকাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ঘরবাড়ি। দেখে মনে হবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কয়েকটি বাড়ি। ছাউনির টিনগুলো দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। বাড়ির লোকেরা সরাতে পারেনি কোনো জিনিসপত্র, এমনকি রান্নাঘরের ভাত-তরকারিও।

জিমাইলের দাদা সনাতন সরেন দাদি রুমালী হাসদা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রান্নাঘরে ভাত-তরকারি রান্না করা ছিল। হাতে-পায়ে ধরে জিনিসপত্র সরানোর জন্য আধঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, জমির দাম দিয়ে দেবো, উচ্ছেদ করিয়েন না। কিন্তু কথা শোনেনি।

রুমালী হাসদা জানান, তাদের পাঁচটি পরিবার খাসজমি মনে করে ২৫ বছর ধরে সেখানে বাস করছিল। এর মধ্যে ওই জমি নিজেদের দাবি করে নজরুল ইসলাম আলমগীর তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে কয়েকজন আদালতে মামলা করেন।

রুমালী হাসদার দাবি, আদালতের একতরফা রায়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিষয়ে কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘একটি জিনিসও বাহির করতে দিল না। জিনিস সরাইবার লাইগ্যা দুঘণ্টা সময় চাহিয়্যাছিনু। তা- দিলেন না।


উচ্ছেদ অভিযানে আসা রাজশাহী জেলা জজ আদালতের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আদালতের নাজির বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা মামলায় উচ্ছেদের আদেশ দেন গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতের বিচারক। মামলার বাদী আলমগীর কবির দিং বিবাদী সোনা দিং (সনাতন সরেন) উচ্ছেদ অভিযানের সময় নাসির উদ্দিন নামে এক আইনজীবী, গোদাগাড়ী থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘বাড়িঘর ভাঙার আগে আমরা ভুক্তভোগীদের বলেছিলাম, বাদীর সঙ্গে সমঝোতা করে সময় নেওয়ার জন্য। কিন্তু বাদী রাজি না হওয়ায় আমরা আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বাদীকে দখল বুঝিয়ে দিয়েছি।

মামলার বাদীদের একজন আলমগীর কবির বলেন, ‘আদালতের উচ্ছেদ আদেশ পেয়ে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছি, তারা নিজেরা যেন বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে সরে যান। কিন্তু তারা সেটা মানেননি।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, উচ্ছেদের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ হয়েছে শুনেছি। শোনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি, তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে।

© all rights reserved - Janajatir Kantho