জাতীয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জাতীয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ঢাকায় ভূমি, বন ও সম্পদের উপর আদিবাসীদের অধিকার শীর্ষক সভা

 


আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি, বন ও সম্পদের উপর অধিকার শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। মঙ্গলবার (১৭ জুন), ঢাকার মোহাম্মদপুরের সিবিসিবি সেন্টারে এ আলোচনা সভা হয়।

সভায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কার্যকরী সদস্য রিপন চন্দ্র বানাইয়ের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৌরভ সিকদার, আদিবাসী ফোরামের সহ সভাপতি অজয় এ মৃ, এএলআরডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ্যাডভোকেট একে এম বুলবুল আহমেদ, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে প্রমুখ।

সভায় অধ্যাপক সৌরভ শিকদার বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে আদিবাসীদের যে সমস্যা ছিল, সেটা বিগত সরকারের আমলেও সমাধান হয়নি। বর্তমানে এ সমস্যাটা আরো বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেখানে নতুন করে ইপিজেড করার পরিকল্পনা চলছে, এ নিয়ে আদিবাসীরা উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, মধুপুরে শালবন উদ্ধারের জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। কিন্তু এটি কতটুকু সফল হবে তার উপর নির্ভর করবে। মধুপুরে বনবিভাগ কর্তৃক আকাশি চারা রোপনের জন্য শালবন কেটে ফেলা হচ্ছে।

মধুপুরে সামাজিক বনায়নের নামে আদিবাসীদের জমি দখলের কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে এ কাজ বন বিভাগ যে করবে না তার কি নিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। 

সভায় সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন আদিবাসী ফোরামের সহ সভাপতি অজয় এ মৃ। তিনি আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সবাইকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শিক্ষা, সংষ্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম ও সংগঠনের কার্যকরী সদস্য সোহেল চন্দ্র হাজং। তারা সংবিধানে আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, পৃথক ভূমি কমিশন গঠন সহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান। 

কারা হেফাজতে বম জনগোষ্ঠীর ২ জনের মৃত্যু, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

 

লালসাংময় বম  লালত্লেং কিম বম (বাঁ দিক থেকে) ছবি: সংগৃহীত

কারা হেফাজতে লালসাংময় বম এবং লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীসহ ২৩৫ নাগরিক। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে নিরপরাধ বম জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার লালসাংময় বমের মৃত্যুতে আমরা তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ।সন্ত্রাস দমনে নামে বান্দরবানে নির্বিচার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষকে আটক, বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর নারী, শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর কারাবন্দী রাখার তীব্র নিন্দা জানাই।

নিরপরাধ বম নাগরিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্য সন্দেহে বম জাতিগোষ্ঠীর যে কাউকে যখন-তখন গ্রেপ্তার বা হয়রানির নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রীয় নীতির শিকার লালসাংময় বমকে ২০২৩ সালে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল।

পরিবারের অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী নিরপরাধ লালসাংময় বম প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ অবহেলার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে গত ২৯ মে তড়িঘড়ি করে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। অবশেষে ৩১ মে চমেক থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরার আগেই মৃত্যুবরণ করেন কারাবন্দী লালসাংময় বম।

লালসাংময় বমের পরিবারের অভিযোগ অমূলক নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরও একজন বম তরুণ কারা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৫ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আদিবাসী তরুণ লালত্লেং কিম বম বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, ‘বিনা বিচারে এক বছর ধরে লালত্লেং কিমকে বন্দী রাখা হয় এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

কারা হেফাজতে মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত আটক নিরপরাধী বমদের মুক্তিসহ বিবৃতিতে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছেবম জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, হাটবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসার ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা; সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে কেএনএফসহ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা; কেএনএফকে কেন্দ্র করে জাতিগত নিধন, হয়রানি, আটক বন্ধ করা এবং পাহাড় সমতলের সব নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেনগণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা প্রমুখ।

© all rights reserved - Janajatir Kantho