বাংলাদেশের বক্সিংয়ের তরুণ তুর্কি ইমন তঞ্চঙ্গ্যা

 


বয়স সবেমাত্র কুড়ি। এই বয়সেই শক্তি-সামর্থ্যে পেছনে ফেলেছেন অনেক অভিজ্ঞ বক্সারদের। ক্ষিপ্রতা, হার না মানা মানসিকতা আর দক্ষতায় জানান দিয়ে রাখছেন দেশের ভবিষৎ বক্সিং জগৎতে রাজত্ব করার। তিনি ইমন তঞ্চঙ্গ্যা।

যিনি গত ২৪ মে, এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রমোশন্সের উদ্যোগে আয়োজিত ‘এক্সেল কনটেন্ডার সিরিজ ২.০’ এ অংশ নিয়ে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় তিনি রিং-এ নেমেছিলেন শক্তিশালী ভারতীয় বক্সার চন্দনদীপের বিরুদ্ধে। যিনি এরই মধ্যে খেলেছেন দশের অধিক ম্যাচ। বয়স, শক্তি-সামর্থ্যেও এগিয়ে। তবে ইমনের অদম্য মানসিকতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

মিডলওয়েট ক্যাটাগরিতে বাউটটি ছিল ছয় রাউন্ডের। পুরো বাউটে ইমন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। মিডলওয়েট ক্যাটাগরিতে ছয় রাউন্ডের বাউটটি ছিল  ইভেন্টের সবচেয়ে ফ্ল্যাগশিপ লড়াই। প্রথম রাউন্ড থেকেই যেখানে প্রতিপক্ষের উপর ছড়ি ঘুরান ইমন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তার উপর্যপুরি জবাব, কাট ও পাঞ্চে মাটিতে পড়ে যান চন্দন। তবে হার মানেনি। নিজেকে সামনে নিয়ে পরের দুই রাউন্ডে ভালোভাবেই লড়াই চালিয়ে যান এই ভারতীয় বক্সার।

তবে পুরো বাউটে ইমন ছিলেন ক্ষুরধার। দু-একবার পাল্টা আক্রমণের চাপে পড়লেও মুহূর্তেই সামলে নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর প্রতিষ্ঠা করছিলেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। জমজমাট লড়াইয়ের শেষ রাউন্ডে গিয়ে তার আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে আর পেরে ওঠেননি চন্দন। ইমনের আত্মবিশ্বাস আর টিকেও বক্সিং একডেমিতে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের হর্ষধবনি বলে দিচ্ছিল ম্যাচের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে। ইমন জিতেছেন তিন রেফারির সম্মিলিত রায়ে।

দেশের তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর প্রথম পেশাদার বক্সার তিনি। বান্দরবানের আলীকদমের বুলু কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা ইমন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ। গ্রামের বড় ভাইদের সঙ্গে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলতেন। বঙ্গবন্ধু স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টেও উপজেলা পর্যায়ে সেরা হয়ে জেলা পর্যায়ে খেলেছেন।

ইমনের বড় ভাই প্রণয় তঞ্চঙ্গ্যা বান্দরবান সদরে পড়াশোনা করতেন। একসময় স্কুল বদলে ইমনও চলে যান সেখানে। ভর্তি হন বীর বাহাদুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কলেজে পড়াশোনার সময়ই বক্সিয়ের সাথে পরিচয় হয়। আর সেখান থেকেই এগিয়ে শুরু হয় এগিয়ে চলার গল্প। ধীরে ধীরে বক্সিং হয়ে উঠে তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

২০১৭ সালে বক্সিং ফেডারেশন আয়োজিত জুনিয়র ন্যাশনাল বক্সিং কম্পিটিশনের জন্য বান্দরবানের ৮ জনের দলে সুযোগ পেয়েছিলো সে। জেলা পর্যায়ে সেরা হয়ে তারা পরে বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামে খেলতে যান। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে পৌঁছান জাতীয় পর্যায়ে। এখন স্বপ্ন দেখেন অগ্রজ সুরো কৃষ্ণ চাকমার মতো বক্সিংয়ে নিজেকে অনন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার।

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho