রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ১৬টি পরিবারকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সমাবেশ
হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া গ্রামে
রাজশাহীর বিক্ষুব্ধ নাগরিক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দের
আয়োজনে এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৫৩ বছর আগে এখানে ১৬ কাঠা জমির ওপর বাড়ি করে পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবার। তিন প্রজন্মে ছয়টি বাড়ি এখন ১৬টি হয়েছে। পাড়াটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আদিবাসীপাড়া হিসেবে পরিচিত। এতদিন পর এখন এ জমির মালিকানা দাবি করছেন সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি পাহাড়িয়াদের উচ্ছেদ করে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গাটি দখলের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। সাজ্জাদের চাপে ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার জায়গা ছেড়ে চলে গেছে। এখন ১৩টি পরিবার রয়েছে। আগামী রোববার তাদেরও এ পাড়া ছেড়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন।
বক্তারা আরো বলেন, অবিলম্বে মালপাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর লোকজনের নিরাপত্তা বিধানসহ তাদেরকে নিজেদের ভূমি ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, উচ্ছেদ পরিকল্পনাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিতসহ সমতলের জাতিসত্তাসূহের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি করতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী গবেষণা পর্ষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক গোলাম সারোয়ার সুজন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার আলিফ, মানবাধিকার কর্মী ও সিসিবিভিও আরিফ ইথার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবাস চন্দ্র হেমব্রম, আসারুর সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স হেমন্ত টুডু, গণসংহতি আন্দোলনের আবদুল্লাহ আল মুইজ, বাসদ রাজশাহী জেলা শাখার সদস্য শামসুল আবেদীন ডন প্রমুখ।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় হলেও ভয়ে আছেন পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো। তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে আবেদন করেছেন। এতে বলা হয়, সাজ্জাদ আলী তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা খুবই ভয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। চরমভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। এতে সই করেছেন বাবলু পাহাড়িয়া, সুধীর বিশ্বাস পাহাড়িয়া, দিশনি পাহাড়িয়া, মুনু পাহাড়িয়া, জরিনা পাহাড়িয়া, অধীর, গণেশ, শ্রাবণ, রিপন, নিতাই বিশ্বাস, শিপেন, উপেন রবিদাস, পরিমল চন্দ্র ওড়াও প্রমুখ।
বিষয়টি নিয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল বারী গণমাধ্যমেক বলেন, ‘নিরাপত্তা চেয়ে পাহাড়িয়ারা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। এরপর রাতেই আমি সাজ্জাদ আলীকে থানায় ডেকেছিলাম। তিনি নিশ্চিত করেছেন, পাহাড়িয়াদের তিনি কোনো ঝামেলা করবেন না। তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন।’
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন