টাঙ্গাইল মধুপুরের শালবন পরিবেষ্টিত গারো গ্রামগুলো মেতে উঠেছে রংচুগালা উৎসবে। ধরাতি, থানারবাইদ, বন্দোরিয়ার পর গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জয়নাগাছা গ্রামে রংচুগালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই অনুষ্ঠান কয়েকদিন পর্যন্ত চলবে।
জয়নাগাছার সং নকমা অনন্ত নকরেকের বাড়ি থেকে রংচুগালা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উৎসবে আমুয়া সহ অন্যান্য কৃত্যাদিতে পৌরহিত্য করেন খামাল জোসেন দিব্রা। এসময় মিদং খা (মৃত ব্যক্তির জন্য শস্য বীজ প্রদান) পর্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনেরা মিদং খিম্মায় বেঁধে উৎসর্গ করেন।
পরে ঘরে ঘরে ঘুরে জগতের সকলের মঙ্গল কামনায় মারাং গাল্লা অনুষ্ঠান করা হয়। এসময় দামা, আদুরি, রাং বাজিয়ে মিল্লাম স্ফী হাতে খামাল গ্রিকা (যুদ্ধ নৃত্য প্রদর্শন) করেন।
জয়নাগাছা গ্রামের বাসিন্দা কাজল চিসিম জনজাতির কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্দ কোনো কিছু যেন অনিষ্ট সাধন করতে না পারে সেজন্য মারাং গাল্লা করা হয়। গতকাল ১২টি ঘরে এই অনুষ্ঠান করা হয়। এই অনুষ্ঠানের পরপরই বৃষ্টি হচ্ছে। ধীরে ধীরে গ্রামের বাকি পরিবারগুলোতে মারাং গাল্লা করা হবে।’
রংচুগালার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসারেক মতাদর্শে বিশ্বাসী জেসি দালবত বলেন, ‘সাংসারেক ধর্ম অনুসারীদের প্রধান দুটি উৎসব রংচুগালা ও ওয়ানগালা। সাংসারেক মান্দিদের বিশ্বাস প্রকৃতি নির্ভর। জীবনধারনের জন্য প্রকৃতির যে কয়টি অপরিহার্য শক্তি রয়েছে, যেগুলো ছাড়া শুধু মানব জীবন নয়, কোন প্রাণ বা জীবের টিকে থাকা সম্ভব নয়; সেইসব প্রাকৃতিক শক্তিকে নিজেদের রক্ষাকর্তা দেবতা হিসাবে পূজা করতো এবং নিজেদের পালনকর্তা হিসাবে মেনে চলতো। সাংসারেকরা প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান সহমর্মিতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, প্রকৃতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও অনুগত থাকার অনুষ্ঠান হল রংচুগালা। ’
জেসি দালবত আরো বলেন, ‘সাংসারেকদের বিশ্বাস বাগুবা বরম্বির চিফাংপাকসা (গর্ভ) থেকে পৃথিবীর সকল প্রাণের জন্ম। তাই তারা তাদের খাদ্যশস্য উৎপাদনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সময় যেসব প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষতিসাধন করে ও যেসব প্রাণীকূলের জীবন বিনষ্ট করে তার জন্য রংচুগালার মাধ্যমে প্রাণ ও প্রকৃতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা চেয়ে ও নিজেদের অনুগত স্বীকার করে অনুষ্ঠানটি করা হয়।’
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন