শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গারো নারীর জমি ভুয়া উত্তরাধিকার সাজিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক মামলায় হয়রানি করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ১ নম্বর পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মেষকুড়া গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের এসব কথা বলেন ভুক্তভোগীর বোন বিথিলা চাম্বুগং।
সংবাদ সম্মেলেনে তিনি বলেন, ‘আমি একজন গারো নারী। আমার বোন বন্দনা চাম্বুগং একজন নারী নেত্রী। উপজেলার ডালুকোনা গ্রামের মাইন উদ্দিন, আব্দুল খালেক, আব্দুস সালাম ও জীবিতা মারাক পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, বন্দনার নামে নামখারিজসহ জমির প্রকৃত বৈধতা থাকা সত্ত্বেও ভুয়া উত্তরাধিকার বানিয়ে ৪ একর ৯২ শতাংশ লিখে নিয়ে বেহাত করতে নানা অপকৌশল ও রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানির হুমকিসহ নানাভাবে নাজেহাল করছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্দারুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মিজাজ মারাকের ৪ একর ৯২ শতাংশ জমি বিআরএস রেকর্ড অনুযায়ী ৩ নম্বর খতিয়ানে ‘খ’ তফসিলভুক্ত হয়। যা পরবর্তী সংশ্লিষ্ট একাধিক জায়গা থেকে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার সনদ অনুযায়ী অবমুক্ত আইনে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মিজাজ মারাক এর নাতির ঘরের পুতি বন্দনা চাম্বুগংয়ের নামে ওই জমির খারিজ সম্পন্ন হয়। মোট ৪ একর ৯২ শতাংশ জমির মধ্যে ৬৫ শতাংশ জমি ১৯৮২ সালে খুকুমনি সাংমাকে মৃত মিজাজ মারাকের কন্যা দেখিয়ে তার কাছ থেকে কিনে নেন জালাল উদ্দিন। ১৯৯৪ সালে মাইন উদ্দিন ও তার পিতা আব্দুল খালেক একই খতিয়ানভুক্ত জমিতে মিলি মারাককে নাতি হিসেবে উত্তরাধিকারী বানিয়ে তার কাছ থেকে ১ একর ৮৫ শতাংশ জমি কিনে নেন। ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের (টিডব্লিউএ) নালিতাবাড়ী শাখার চেয়ারম্যান কোপেন্দ্র নকরেক প্রদত্ত উত্তরাধিকার সনদে মিজাজ মারাকের উত্তরাধিকারী দেখানো হয় পুতি বন্দনা চাম্বুগংকে। ২০২৩ সালের ১৮ জুন প্রদত্ত সনদ অনুযায়ী শৈক্যমনি মারাকের উত্তরাধিকারী দেখানো হয় পুতি জীবিতা মারাককে। ২০২৪ সালের ৩১ মে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক ও আইন বিষয়ক সম্পাদক লুইস নেংমিনজা প্রদত্ত উত্তরাধিকার সনদে দেখা যায়, মিজাজ মারাকের উত্তরাধিকারী হয়েছেন বন্দনা চাম্বুগং। অন্যদিকে, শৈক্যমনি মারাকের উত্তরাধিকারী হয়েছেন জীবিতা মারাক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একইভাবে ২০২৪ সালের ১০ জুন ১ নং পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন প্রদত্ত উত্তরাধিকার সনদে বন্দনা চাম্বুগংকে মিজাজ মারাকের উত্তরাধিকারী এবং জীবিতা মারাককে শৈক্যমনি মারাকের উত্তরাধিকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট জীবিতা মারাক নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে এসএ ২৭ নম্বর খতিয়ানে উল্লেখিত জমির মালিক মিজাজ মারাক তার মায়ের নানী নন এবং তার মা লিমি মারাক ওই জমির উত্তরাধিকারী নন বলে ঘোষণা করেন। এমনকি ওই খতিয়ানে উল্লেখিত ৪ একর ৯২ শতাংশ জমিতে তাদের কোন ভোগদখল নেই বলেও ঘোষণা দেন। কিন্তু রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি পুনরায় আরও একটি এফিডেভিট করেন জীবিতা মারাক। এই এফিডেভিটে আগের এফিডেভিট অস্বীকার করে নিজেকে উত্তরাধিকার দাবি করেন।
সম্প্রতি বন্দনার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের একটি মামলা দিয়ে জীবিতা মারাক পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করায় তাকে। বিথিলা চাম্বুগং অভিযোগ করে বলেন, ‘ভুয়া ঘটনা সাজিয়ে বন্দনার বিরুদ্ধে ওই মামলা দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বন্দনার নামে থাকা ৪ একর ৯২ শতক জমির মধ্যে উল্লেখিত ব্যক্তিগণ ২ একর ৫০ শতক ভোগদখল করছেন। এছাড়া বন্দনাকে হয়রানি করতে সম্প্রতি তারই আত্মীয় জীবিতা মারাককে দিয়ে মিথ্যা মারধর ও টাকা আত্মসাতের মামলা করিয়েছেন। বন্দনাকে রাজনৈতিক মামলায় ফেলে হয়রানির হুমকিও দিচ্ছেন প্রতিপক্ষের লোকজন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জমি ক্রেতা মাইন উদ্দিন ও জালাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা তিনজন মিলে মোট ২ একর ৫০ শতাংশ জমি মিজাজ মারাকের উত্তরাধিকারী লিমি মারাক ও খুকুমণি সাংমার কাছ থেকে সাফ-কবলা ক্রয় করেছি। এ সময় অপর পক্ষ বন্দনা চাম্বুগংয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতি করে জমি খারিজ করিয়েছেন।’
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন