শুধু এই সরকার নয়, সেই অতীত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নানাভাবে আগ্রাসনের শিকার। আমরা সামরিক বাহিনীর নির্যাতন নিরসনে স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলাম। তখন থেকে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন চাওয়া মানেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ডিনস কমপ্লেক্সে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর: পাহাড়-সমতলে জাতিসত্তাসমূহের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক মাইকেল চাকমা এসব কথা বলেন।
মাইকেল চাকমা বলেন, ‘সেই অতীত থেকে ব্রিটিশরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার পর থেকে একে একে পার্বত্য চট্টগ্রাম নানাভাবে আগ্রাসনের শিকার হয়। ১৮০৭ সালের আগস্টের এই দিনে ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে। এর আগে আমাদের স্বাধীন শাসনব্যবস্থা ছিল। তারপর ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর দেশ বিভাজনের সময় আদিবাসীরা আবারও প্রতারণার স্বীকার হয়। দেশভাগের পর পাকিস্তানের অংশ হিসেবে তাদের যে অধিকারের সাংবিধানিক রূপ দেওয়া হয়, তা আবারও বাতিল করা হয়।’
ইউপিডিএফ-এর এই সংগঠক আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২-এর সংবিধানে আমাদের বাঙালি বলা হয়। পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিব পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে আমাদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তারপর জিয়া ক্ষমতায় এসে পাহাড়কে সামরিক শক্তিতে দেখতে থাকেন এবং সেখানে সামরিকায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে গণতান্ত্রিক আগ্রাসনের পরিকল্পনা আনেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসন করেন, যা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে চলতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হলো। এই চুক্তির ফলেও আমরা পুনরায় প্রতারিত হলাম। আমরা যে প্রত্যাশার কথা বলছি, তা আমাদের অনেক ছিল। কিন্তু বারবার প্রত্যাশার বিপরীতে আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র তার আধিপত্যবাদের যে চিন্তা, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। যে সরকারই এসেছে, তারা নিজ নিজ স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে শুধু ঝুলিয়েই রেখেছে।’
রাবির সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার সজন বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যে অধিকার, তা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও প্রাপ্তির বেলায় শূন্য। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে সন্ত্রাস উচ্ছেদের নামে তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ বিলোপ হলেও তাদের অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী রাবি শাখার সাবেক সভাপতি প্রদীপ মার্ডি বলেন, ‘পাহাড়িদের প্রাপ্তির প্রশ্নটা পঞ্চাশ বছরে প্রশ্ন হয়েই থেকেছে। রাষ্ট্রের ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান কেউ-ই বহু জাতিত্ব স্বীকার করেনি। বাংলাদেশ বহুজাতির হলে রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও তার উপস্থিতি থাকতে হবে।’
পিসিপি রাবি শাখার সভাপতি শামীন
ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন পিসিপি সভাপতি অমল ত্রিপুরা, রাবি শাখা
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিব হোসেন, রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষে কৌশিক দাস কঙ্কন, ছাত্র গণমঞ্চের
আহ্বায়ক নাসিম সরকার, ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আজাদ ইসলাম প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন