কারাগারে বম যুবকের মৃত্যু, বিচার চেয়ে বিক্ষোভ

 


চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় লাল ত্লেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার, নির্দোষ বম নারী ও শিশুসহ সকলকে মুক্তি ও চিংমা খেয়াংয়ের গণধর্ষণের পর হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ ১৭ মে, বিকাল ৩টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ বিক্ষোভের আয়োজন করে।

পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিউ মারমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার সভাপতি সুমন চাকমা।

সমাবেশে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সাবেক সভাপতি দিশান তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আন্দোলনের শক্তিকে ধ্বংস করতে রাষ্ট্রের মদদে নানা দল-উপদল সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই সাথে যারা অধিকারের কথা তুলেন তাদের নানাভাবে হয়রানি করে তাদের বাকরুদ্ধ করা হচ্ছে।

পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ চাকমা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড়ে সেটেলার ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বহু ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে যার সুষ্ঠু বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। এছাড়াও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।

পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, লাল ত্লেং কিম বমের মৃত্যু নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের শোষণ-নিপীড়নের একটি উদাহরণ। পাহাড়ে সেনাশাসন যতদিন থাকবে ততদিন পাহাড়ে শান্তি ফিরবে না। সরকারকে তাই পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিতে হবে।

সোহেল খেয়াং বলেন, ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও চিংমা খেয়াং এর মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন বিচার দিতে পারেনি। সরকারের কাছে অনুরোধ পাহাড়ের যত খুন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার দ্রুত বিচার দিতে হবে।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বম সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে সংহতি জানান।  

একান্নবর্তী রণজিৎ বিশ্বাস স্মৃতি সম্মাননা পেলেন কবি মতেন্দ্র মানখিন

 


একান্নবর্তী রণজিৎ বিশ্বাস স্মৃতি সম্মাননা ২০২৫ পেয়েছেন গারো জাতিসত্তার কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক মতেন্দ্র মানখিন।

১৭ মে বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে তিনি এ সম্মাননা গ্রহণ করেন।

মতেন্দ্র মানখিন ছাড়াও আরও তিনজন গুণী এ সম্মাননা পেয়েছেন। তারা হলেন- কথাসাহিত্যিক হাসান অরিন্দম, চলচ্চিত্র পরিচালক অপরাজিতা সঙ্গীতা এবং শিশুসাহিত্যিক (মরণোত্তর) রাইদাহ গালিবা কুইন।

একান্নবর্তীর সম্পাদক শেলী সেনগুপ্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কাপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদ।

পাহাড়ে কি জেনোসাইড চলছে?

 


আজ দুপুরে সংবাদ এলো চট্টগ্রাম কারাগারে এক বম তরুণের মৃত্যু হয়েছে। কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শুধু তিনি নন্, গণগ্রেপ্তার চলেছে। নারী, শিশু, থ্যালসেমিয়া রোগী, গর্ভবতী মা, তরুণ, বৃদ্ধ-যাকে বলে নির্বিচার গ্রেপ্তার বেথেলপাড়ায়।

সেদিন ছিল এপ্রিল ২০২৪ সাল। রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ২রা এপ্রিল। গ্রেপ্তারকারীদের ভাষায় অভিযানে গ্রেপ্তার। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রদ্রোহীদের গ্রেপ্তার। ব্যাংকে হামলা হলো ২রা এপ্রিল, অভিযান শুরু হলো এপ্রিল। ব্যাংকে হামলা, পুলিশের অস্ত্রলুট ঘন্টাব্যাপি চলেছে। সেনাবাহিনী বিজিবি ব্যটালিয়ন সদর দপ্তর এবং থানার অদুরেই ঘটনা। ঘটনাস্থলের পাশে বেথেলপাড়ায় দুঃসাহসিক অভিযানের দল পৌঁছতে সময় লেগেছে দিন। অভিযানকারীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে গ্রেপ্তার করলেন, দুধর্ষ সন্ত্রাসী নারী, গর্ভবতী মা, থ্যালাসেমিয়া রোগী। ওই গ্রেপ্তারদের এক তরুণ আজ মারা গেছেন। গ্রেপ্তারের আগে কী সুন্দর, সুঠাম চেহারা ছিল তাঁর।

এখনও দুইজন থ্যালাসেমিয়া রোগী, ২৫ নারী, তিনজন শিশুসহ শতাধিক বম বান্দরবান চট্টগ্রামের কারাগারে রয়েছেন। মাসখানেক আগেও এক খুমি জনগোষ্ঠীর স্কুল শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মীয়স্বজনরা আদালত থেকে কয়েকজনকে জামিনের চেষ্টা করছেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, আদালত একটি মামলায় জামিন দিলে অশরীরি Holy soul আরও দুইটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। জামিনে বের হওয়ার সুযোগ নেই। এরকম মামলা আছে ২২ থেকে ২৪টি।

বমদের সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে, প্রায় ১৩ হাজার বম জনগোষ্ঠীর প্রায় চার হাজার সীমান্ত অতিক্রম করেছে। ছয়টি পাড়া উচ্ছেদ হয়েছে। দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। সীমান্ত অতিক্রমকারীরা কেউ কেউ ফিরে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ১৫-১৬টি পরিবার ফিরে এসেছে। রুমায় মাইক্রো গাজার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কেএনএফ নামধারী স্বপ্নদোষ হওয়া কতিপয়দের এবং ছেড়া কাঁথায় ঘুম পাড়ানো তাদের স্বপ্নদ্রষ্টাদের অনুশোচনা আছে কিনা জানি না।

এই নারী, শিশু, থ্যালাসেমিয়া রোগী সন্ত্রাসীদের আদালতে হাজির করার সময় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। আসামীর গাড়ির সামনে, পেছনে র‌্যাব পুলিশের ভারি অস্ত্রে সজ্জিত ডজনখানেক গাড়ি, সতর্ক সাইরেন বাজিয়ে চলছে আদালতের দিকে। মানে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অতিমানব তৈরি করতে গিয়ে তৈরি হওয়া দানব আসছে... দানব আসছে... সবাই সতর্ক হোন।

এই দানব সাজনোর অর্থ কী হতে পারে? হতে পারে, একটা ভয়ঙ্কর আতঙ্কজনক বয়ান বা ন্যারেটিভ তৈরি করা। যাতে করে একদিকে তাদের গ্রেপ্তার, জামিনের আবেদনের সুযোগ না দেওয়ার, কারাগারে দিনের পর আটকে রাখার বৈধতা জায়েজ করা যায়। মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়, এই ভয়ঙ্করদের গ্রেপ্তার করা আসলেই উচিৎ কাজ হয়েছে। কারাগারে রাখাও দরকার।

অপরদিকে বম জনগোষ্ঠীসহ পাহাড়ি মানুষদের জন্য নতি স্বীকারের বার্তা দেওয়া। মোসাহেবিপনা না করলে সবার এই দশা হবে। পাহাড়ে যুগের পর যুগ এভাবে চলছে। বয়ানে তুলে ধরা হয়, মানুষের, রাষ্ট্রের অখণ্ডতার নিরাপত্তা এই ভয়ঙ্ক দানবদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

আমি জানি না, এখানে জেনোসাইড অ্যাপ্রোচে নিরাপত্তার বয়ান তৈরি হচ্ছে কি না। যদি হয়ে থাকে, না হলে মঙ্গল, যারা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষার বয়ানে রাজপথে আদিবাসী তাদের পরিচয় নিয়ে হেইট স্পীচ দিচ্ছেন, সেই স্পীচ কিন্তু কোন এক সময় জেনোসাইডাল জাষ্টিসে প্রামাণ্য আলামত হতে পারে।

*লেখাটি সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমার ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত।

© all rights reserved - Janajatir Kantho