আজ দুপুরে সংবাদ এলো চট্টগ্রাম কারাগারে এক বম তরুণের মৃত্যু হয়েছে। কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)
ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শুধু তিনি নন্, গণগ্রেপ্তার চলেছে। নারী, শিশু,
থ্যালসেমিয়া রোগী, গর্ভবতী মা, তরুণ, বৃদ্ধ-যাকে বলে নির্বিচার গ্রেপ্তার বেথেলপাড়ায়।
সেদিন ছিল ৮ এপ্রিল ২০২৪ সাল। রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ২রা এপ্রিল। গ্রেপ্তারকারীদের ভাষায় অভিযানে গ্রেপ্তার। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রদ্রোহীদের গ্রেপ্তার। ব্যাংকে হামলা হলো ২রা এপ্রিল, অভিযান শুরু হলো ৮ এপ্রিল। ব্যাংকে হামলা, পুলিশের অস্ত্রলুট ঘন্টাব্যাপি চলেছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি ব্যটালিয়ন সদর দপ্তর এবং থানার অদুরেই ঘটনা। ঘটনাস্থলের পাশে বেথেলপাড়ায় দুঃসাহসিক অভিযানের দল পৌঁছতে সময় লেগেছে ৬ দিন। অভিযানকারীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে গ্রেপ্তার করলেন, দুধর্ষ সন্ত্রাসী নারী, গর্ভবতী মা, থ্যালাসেমিয়া রোগী। ওই গ্রেপ্তারদের এক তরুণ আজ মারা গেছেন। গ্রেপ্তারের আগে কী সুন্দর, সুঠাম চেহারা ছিল তাঁর।
এখনও দুইজন থ্যালাসেমিয়া রোগী, ২৫ নারী, তিনজন শিশুসহ শতাধিক বম বান্দরবান ও চট্টগ্রামের কারাগারে রয়েছেন। মাসখানেক আগেও এক খুমি জনগোষ্ঠীর স্কুল শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মীয়স্বজনরা আদালত থেকে কয়েকজনকে জামিনের চেষ্টা করছেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, আদালত একটি মামলায় জামিন দিলে অশরীরি Holy soul আরও দুইটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। জামিনে বের হওয়ার সুযোগ নেই। এরকম মামলা আছে ২২ থেকে ২৪টি।
বমদের সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে, প্রায় ১৩ হাজার বম জনগোষ্ঠীর প্রায় চার হাজার সীমান্ত অতিক্রম করেছে। ছয়টি পাড়া উচ্ছেদ হয়েছে। দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। সীমান্ত অতিক্রমকারীরা কেউ কেউ ফিরে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ১৫-১৬টি পরিবার ফিরে এসেছে। রুমায় মাইক্রো গাজার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কেএনএফ নামধারী স্বপ্নদোষ হওয়া কতিপয়দের এবং ছেড়া কাঁথায় ঘুম পাড়ানো তাদের স্বপ্নদ্রষ্টাদের অনুশোচনা আছে কিনা জানি না।
এই নারী, শিশু, থ্যালাসেমিয়া রোগী সন্ত্রাসীদের আদালতে হাজির করার সময় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। আসামীর গাড়ির সামনে, পেছনে র্যাব পুলিশের ভারি অস্ত্রে সজ্জিত ডজনখানেক গাড়ি, সতর্ক সাইরেন বাজিয়ে চলছে আদালতের দিকে। মানে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অতিমানব তৈরি করতে গিয়ে তৈরি হওয়া দানব আসছে... দানব আসছে... সবাই সতর্ক হোন।
এই দানব সাজনোর অর্থ কী হতে পারে? হতে পারে, একটা ভয়ঙ্কর আতঙ্কজনক বয়ান বা ন্যারেটিভ তৈরি করা। যাতে করে একদিকে তাদের গ্রেপ্তার,
জামিনের আবেদনের সুযোগ না দেওয়ার, কারাগারে দিনের পর আটকে রাখার বৈধতা জায়েজ করা যায়। মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়, এই ভয়ঙ্করদের গ্রেপ্তার করা আসলেই উচিৎ কাজ হয়েছে। কারাগারে রাখাও দরকার।
অপরদিকে বম জনগোষ্ঠীসহ পাহাড়ি মানুষদের জন্য নতি স্বীকারের বার্তা দেওয়া। মোসাহেবিপনা না করলে সবার এই দশা হবে। পাহাড়ে যুগের পর যুগ এভাবে চলছে। বয়ানে তুলে ধরা হয়, মানুষের,
রাষ্ট্রের অখণ্ডতার নিরাপত্তা এই ভয়ঙ্ক দানবদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
আমি জানি না, এখানে জেনোসাইড অ্যাপ্রোচে নিরাপত্তার বয়ান তৈরি হচ্ছে কি না। যদি হয়ে থাকে, না হলে মঙ্গল, যারা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষার বয়ানে রাজপথে আদিবাসী ও তাদের পরিচয় নিয়ে হেইট স্পীচ দিচ্ছেন, সেই স্পীচ কিন্তু কোন এক সময় জেনোসাইডাল জাষ্টিসে প্রামাণ্য আলামত হতে পারে।
*লেখাটি সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি
চাকমার ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন