যারা ধর্ষকদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তাদের মধ্যে একজনকে সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। তারা মারধর করে উক্যনু মারমাকে পরে ছেড়ে দিয়েছে। এই বাংলাদেশের সংবাদ মিডিয়াগুলো একটি ন্যারেটিভ তৈরি করে দিয়েছে সেনাবাহিনীরা দেশপ্রেমিক, পাহাড়ীরা সন্ত্রাসী। কোনো গণমাধ্যম কি এই পর্যন্ত বলেছে, বাঙালি ধর্ষক? ইউনুস সাহেবের মতো পাণ্ডিত্যপূর্ণ সরকারের আমলে আদিবাসী নারীরা কেন ধর্ষিতা হয়?
আজ শুক্রবার, বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের অতিদ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা।
আদিবাসী ছাত্র জনতার ব্যানারে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যনু মারমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক অন্যায়ভাবে আটক ও মারধরের প্রতিবাদ জানানো হয়।
পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি) ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নুমংপ্রু মারমা।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কণ্ঠশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বলেন, ‘আমাদের সমাজকে পাল্টাতে হবে। সমাজ পাল্টালে দেশ পাল্টাতে বাধ্য। পাহাড়ী বাঙালি এই বিভাজনগুলো ভুলে আমাদের এক হয়ে সকল ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমাদের কণ্ঠ জারি রাখতে হবে। শুধু সম্প্রীতির কথা বললে হবে না। সম্প্রীতিকে চর্চা করতে হবে। আমাদের শুধু বাংলাদেশের কথা বললে হবে না, বাংলাদেশে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা বলতে হবে।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘গতকাল উক্যনু মারমার সাথে যা ঘটেছে সেটা আমার বা আপনার সাথেও ঘটতে পারে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের যে নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা চলমান রয়েছে তার মাধ্যমে প্রতিদিন আদিবাসীদেরকে পিষ্ট করা হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুর্মী চাকমা বলেন, ‘বাংলাদেশ বাদে পৃথিবীর কোনো দেশে ধর্ষণের প্রতিবাদ করার জন্য প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার করতে দেখিনি। শুধুমাত্র উক্যনু মারমাকে গ্রেপ্তার করে আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না, কারণ আমরা সবাই মিলে একটি কণ্ঠস্বর। আদিবাসী নারীসহ সকল নারীর নিরাপত্তা প্রদান করে অতিদ্রুত ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করতে হবে ও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নুমংপ্রু মারমা বলেন, ‘উক্যনু মারমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি আমাদের মানুষ না দেখতো, তাহলে তাকে কল্পনা চাকমার মতো গুমও করতে পারতো। এই পর্যন্ত আদিবাসী নারীদের সহিংসতার ঘটনার কোনো বিচার আমরা পাইনি। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সেটেলার বাঙালিদেরকে সবসময় আদিবাসীদের পিছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়। আমরা রাষ্ট্রের এই ধরনের পক্ষপাতমূলক ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার অবসান চাই।’
সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন