দিনাজপুরে সাঁওতাল বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

 


দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পুলিন হেমব্রম (৬০) নামের সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর একজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২ জুন) দুপুর দেড়টায় উপজেলাল ১নং এলুয়ারী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রাম থেকে ওই ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিন হেমরম উপজেলার ১নং এলুয়ারী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত সুপল হেমরমের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষি শ্রমিক ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলাল ১নং এলুয়ারী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে মৃত ব্যক্তির খালাতো ভাই রমেশ হেমরম ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পেছনে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার ভাই পুলিন হেমরম গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় নিজ বাড়ির পাশে বারান্দার কাঠের পাড়ের সঙ্গে ঝুলে রয়েছেন।

এ সময় চিৎকার করলে আশপাশে লোকজন ছুটে এসে থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম খন্দকার মুহিব্বুল বলেন, মরদেহটির সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির এক ছেলে আছে। পরিবারের আপত্তি না থাকায় মরদেহটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।

পাহাড় ধসের পাথরচাপায় ভাঙলো আদিবাসী যুবকের পা

 


বান্দরবানের থানচিতে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে একটি ঘর বিধ্বস্ত এবং পাথরচাপায় আদিবাসী যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে তিন্দু গ্রোপিংপাড়ায় দুর্ঘটনা ঘটে।

আহত যুবকের নাম চশৈনু মারমা (৩০) তিনি তিন্দু গ্রোপিং পাড়ার বাসিন্দা রেদাকসের সন্তান।

আহত চশৈনু এর সহধর্মীনি নাইম্রাচিং মারমা জানান, ঘটনার সময় তাঁদের পরিবারের তিন সদস্য জুমখেতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি তাঁর স্বামী জুমে যাননি, ঘরে ছিলেন। হঠাৎ পাহাড় থেকে মাটি পাথর ধসে পড়লে তাঁদের মাচাং ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। সময় পাথরচাপা পড়ে তাঁর স্বামীর বাম পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। পরে প্রতিবেশীরা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ জানান, পাথরচাপায় চশৈনুর বাম পায়ের নিচের অংশ ভেঙে গেছে। মাথাতেও আঘাত লেগেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তিন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভাগ্য চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, ‘আহত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধ্য অনুসারে সহযোগিতা করেছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

লালসাংময় বমের মৃত্যুকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা পিসিপি’র

 

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তারের শিকার লালসাংময় বমের মৃত্যুর ঘটনাকেরাষ্ট্রীয় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ মন্তব্য করে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)

আজ সোমবার (২ জুন) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।  

বিবৃতিতে পিসিপি জানায়, দীর্ঘ দুই বছরের অধিক বিনা বিচারে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় গতকাল আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪টায় লালসাংময় বম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এটা স্পষ্টতই রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। এরপূর্বেও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনা চিকিৎসায় লালত্লেং কিম বম নামের এক যুবক মারা যায়। যা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে মেরে ফেলার সামিল। অন্তর্বর্তী সরকার এ হত্যার দায় কখনো এড়াতে পারে না।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার খ্যাত চিহ্নিত অপরাধী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের দায়হীনভাবে মুক্তি দেয়া হলেও, বছরের পর বছর ধরে বিনা বিচারে আটক থাকা বম জাতির নিরপরাধ শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষদের এখনো মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর ইউনুস সরকারের জন্য এর চেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা আর হতে পারে না।

বিবৃতিতে নিরপরাধ বমদের মুক্তির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজাতির ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে পিসিপি।  

জুম্ম জনগণের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে প্যারিসে সমাবেশ

 

বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী জনগণের উপর চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে লা ভোয়া দে জুম্ম (জুম্মদের কণ্ঠ)। গতকাল প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে এ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানী ইয়ান ইয়ান। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন লা ভোয়া দে জুম্ম’র কার্যকরী কমিটির সদস‍্য মিসেস সমাপ্তি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক পার্থ দেওয়ান।  

সমাবেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চিংমা খিয়াং-এর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ড, বান্দরবানের বম আদিবাসীদের মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী রাখা, ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতাদের গ্রেফতার, আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং সামরিক নিপীড়নের মতো একাধিক ঘটনা তুলে ধরা হয়।

সমাবেশটি লা ভোয়া দে জুম্মর সভাপতি রেমি চাকমার শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে শুরু হয়। পরে মিস স্বরণীকার কবিতা পাঠ ও শিশু শিল্পী হৃদ্যতা দেওয়ান ভুলং সহ শায়েরী, সমাপ্তি এবং সৃজনী আদিবাসী নৃত্য প্রদর্শন করেন। সমাবেশে রানী ইয়ান ইয়ান ছাড়াও মেকসুয়েল চাকমা, ড. মৃনাল চাকমা সহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।  

বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে জুম্ম জনগণ এখনো নির্যাতন, দখল ও বৈষম্যের শিকার। সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ফ্রান্স সরকার ও জাতিসংঘের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে ৯টি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হল- অবিলম্বে বম আদিবাসীদের মুক্তি প্রদান, চিংমা খিয়াং এর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, অপারেশন উত্তরণ বন্ধ করে বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দখলকৃত জমি ফেরত দেওয়া ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, জাতিসংঘের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অভিযুক্ত সেনাদের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বন্ধ করা।

এছাড়াও জুম্ম জনগণকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত, স্বচ্ছ ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করা ও জুম্ম নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।  

জামিনে মুক্তির একদিন বাদেই বম জাতিসত্তার আরেকজনের মৃত্যু

লালসংময় বম। ছবি: সংগৃহীত 

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তারের শিকার বম জনগোষ্ঠীর আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর নাম লালসংময় বম (৫৫)। তিনি বান্দরবানের ফারুকপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

কেএনএফ সন্দেহে লালসংময়কে গত বছরের এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। একদিন আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান। অসুস্থতা বেড়ে গেলে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে শনিবার রাতে বান্দরবানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গতকাল বেলা আড়াইটায় তিনি মারা যান।

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী আসগর চৌধুরী বলেন, লালসংময় বম নামে একজন ক্যান্সার রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

অসুস্থ লালসংময় বমকে জামিন দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, লালসাংময় বম নামের এক বন্দী দীর্ঘদিন ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। দুই দিন আগে তিনি জামিন পেয়েছেন।

তবে পরিবারের অভিযোগ, সাংময় বমের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলেও তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আলসারে ভুগছিলেন এবং পরে সেটি ক্যান্সারে রূপ নেয়। গত কয়েকদিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে, তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়।

এদিকে, অসুস্থ হলেও সময়মত জামিন না পেয়ে লালসাংময় বমের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। মানবাধিকারকর্মীরা এই ঘটনাটিকে বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। কারা কর্তৃপক্ষ অসুস্থতার দাবি করলেও, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ চিকিৎসার অভাব ও নির্যাতনের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।

‘অপহৃত’ ৫ আদিবাসী যুবককে রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় থেকে উদ্ধার

 


চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় থেকে ‘অপহরণের শিকার’ পাঁচ আদিবাসী যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাঙ্গুনিয়ার লালারখিল এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে অপহৃত পাঁচ জনকে শনিবার রাতে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার যুবকেরা হলেন পাইসুইচিং মারমা, মংক্যউ মারমা, উসিংমং মারমা, থুইসামং মারমা চসিং মারমা। তাঁরা সবাই চন্দ্রঘোনা থানার আমতলীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও উদ্ধার হওয়া যুবকেরা জানিয়েছেনশুক্রবার সন্ধ্যায় তারা বৃষ্টির পানিতে ব্যাঙ ধরতে বের হয়। রাতে তারা লালারখিল এলাকায় আসে। এসময় কিছুদুস্কৃতিকারীতাদের ধরে গহীন পাহাড়ে নিয়ে আটকে রাখে।

শনিবার সকাল ৯টার দিকে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। 

ভুক্তভোগীদের স্বজনরা সন্ধ্যার পর পুলিশকে জানালে, রাতেই দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নামে। অভিযানে তাদের উদ্ধার করা হয়। 

ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং অপহরণকারীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সিফাতুল মাজদার।

© all rights reserved - Janajatir Kantho