বিগত একবছরে (২০২৪) বাংলাদেশের আদিবাসীদের ওপর মোট ৯৭টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ভূমিকেন্দ্রিক ঘটনা ঘটেছে ১৮টি, যার মধ্যে সমতলে ৪টি ও পাহাড়ে ১৪টি এবং মোট ১ হাজার ৭ জন এসব ঘটনার শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ে এক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়। রোববার, (০৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আসাদগেটের ওয়াইডব্লিউসিএ ভবনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে সংগঠনটির প্রজেক্ট অফিসার ত্রিজিনাদ চাকমা জানান, পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই ২০২৫ রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫টি ভূমিকেন্দ্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। ৩৪টি রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যেখানে মোট ৩৬৮ জন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন।
কাপেং ফাউন্ডেশনের অ্যাডভোকেসি অফিসার হ্লারাচিং চৌধুরীর সঞ্চালনায় কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ পাত্র।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, কাপেং ফাউন্ডেশন প্রতিবছর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর এ ধরনের কর্মশালার আয়োজন করে থাকে।
কর্মশালায় ফ্রান্স দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স কো-অপারেশন বিভাগের এমিলি পালাউন বলেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী আদিবাসীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। তারা তাদের ভূমি, সংস্কৃতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী ভূমি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষভাবে সমস্যার শিকার আদিবাসী নারীরা।
কর্মশালায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্র আদিবাসী শব্দটি বলতে চায় না। কেননা আদিবাসী বললে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা করতে হবে। যদি সংবিধানে আদিবাসী স্বীকৃতি এবং আইএলও ১৬৯ অনুস্বাক্ষর করা হয়, তবু আদিবাসীদের অধিকার অর্জিত হবে না। কারণ, আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত আসবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আশা ছিল যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের আদিবাসী মানুষেরা আরও বেশি অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু আমরা সেদিকে যেতে পারিনি। সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনির্মাণ করা যায়নি। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি।’
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক পার্থ শঙ্কর সাহা। অনুষ্ঠানে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, জয়েনশাহি আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের ইউজিন নকরেক, কুবরাজ ইন্টার-পুঞ্জি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং, সিএইচটি জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সন্তশিতো চাকমা বকুল, নমিতা চাকমা প্রমুখ।

