বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে টনি চিরান, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনিরা ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে চন্দন কোচ নির্বাচিত হয়েছেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর), ঢাকার সিবিসিবি হলরুমে আয়োজিত জাতীয় আদিবাসী যুব সম্মেলনে তারা নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী যুব প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আন্তোনি রেমা। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থান দেখলাম। কিন্তু এক বছরের মাথায় এসে সে স্বপ্ন আমরা ভেঙে যেতে দেখছি। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র আদিবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশের মানুষ তাদের পূর্ব পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য আদিবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই বাংলাদেশেও একদিন শাসকদের বোধদয় হবে এবং আদিবাসীদের সাথে একদিন মানবিক, গণতান্ত্রিক আচরণ করবে এবং আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিবে। তার জন্য আমাদের সংগ্রাম নিয়ত জারি রাখতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের যুবকদের এখন আপনি গ্রামে দেখবেন না। তারা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন শহরে গমন করছে তা নয়, নিরাপত্তার কারনেও তারা গ্রাম ছাড়ছে। অনেক আদিবাসী যুবরা এখন পোষাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সমতলের আদিবাসীরা আরো বেশি নিপীড়িত। তারাও অনেকেই এই ঢাকা শহরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অসহনীয় জীবন এবং শ্রেণীগত ও জাতিগত শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আদিবাসী যুবদেরকে সঠিক প্রগতিশীল আদর্শের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, বাংলাদেশে আদিবাসী কারা এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমাদেরকে এই ভূমিতে কে আগে এসেছে, কে পরে এসেছে এই বাইনারীর মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। আমরা যদি ইতিহাস দেখি ১৯৬২ সালে মধুপুর জাতীয় উদ্যান ঘোষণা, প্রায় একই সময়ে কাপ্তাই বাঁধ, গাইবান্ধায় গোবিন্দগঞ্জে সান্তালদের জমিতে চিনিকল ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে আদিবাসীদের জমিতে আদিবাসীদেরকেই সংখ্যালঘুকরণের এক ধরণের নীতি গ্রহন করা হয়েছে। এভাবে ক্রমাগত প্রান্তিকতার মধ্যে ঠেলে দিতে দিতে আজকে তাদেরকে আরো দুর্বল করা হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধেই আদিবাসী যুবদের সংগ্রাম খুবই জরুরী এবং সেটা ক্রমাগত জারি রাখতে হবে।
এছাড়াও সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন কোচ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বক্তব্য রাখেন। বিকেলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অধিবেশনে আদিবাসী যুব ফোরামের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা ও অনুমোদন করা হয়। গঠিত কমিটির মেয়াদ দুই বছর।

কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন