রাষ্ট্র অন্যায়ভাবে আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ বলে: সুলতানা কামাল

 


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র কোনো জনগোষ্ঠীকে জোর করে অন্য কোনো পরিচয় চাপিয়ে দিতে পারে না। রাষ্ট্র আদিবাসীদেরক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবলে সম্বোধন করলে তা অন্যায় অযৌক্তিক। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারা ভুলে যান যে রাষ্ট্র জনগোষ্ঠী তৈরী করে না বরং জনগোষ্ঠীই রাষ্ট্র তৈরী করে।

সোমবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিতসমতল আদিবাসী সম্মেলনঅনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথা বলেন তিনি।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। এই দেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক অধিকার থাকবে। এই দেশ হবে সাম্যের দেশ, ন্যায় বিচারের দেশ, মানবিক দেশ, তার কোনো ব্যত্যয় ঘটতে পারে না। মানবাধিকার বলে, কোনো রাষ্ট্র সংখ্যা অনুযায়ী জনগোষ্ঠীকে বিচার-বিবেচনা করলে তা হবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

সম্মিলিতভাবে সম্মেলনের আয়োজনে করেআমরাই পারিপারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট স্থানীয় নাগরিক সংগঠন লাসটার, নিডা, সোসাইটি, পিকেএসএস, অর্পা, বাঁতে চাই, এমএসএস, ব্রেড এবং এসডিকেএস।

অনিমা কুজুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিচিত্রা তির্কী, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নীলা হাফিজা, জেলা যুব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (. দায়িত্ব) মখলেছুর রহমান, পিকেএসএস এর নির্বাহী পরিচালক ডেইজি আহমেদ, এসডিকেএস এর নির্বাহী পরিচালক নাসিরউদ্দিন মাঈনুল প্রমুখ।

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলার আয়োজন

 


ঢাকায় দুই দিনব্যাপী আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলার উদ্বোধন হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুরস্থ পার্বত্য বৌদ্ধ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ ও আদিবাসী সুহৃদবৃন্দ এ মেলার আয়োজন করেছে।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং আদিবাসী অধিকার কর্মী মেইনথিন প্রমিলা। আয়োজনের উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সদস্য মেজর (অব) তপন বিকাশ চাকমা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা দেশে যত বৈচিত্র্য থাকে সেই দেশ ততটাই সুন্দর। এই দেশে যদি কেবল একটি জনগোষ্ঠী থাকতো তখন এতটা সুন্দর লাগতো না।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ী খাবার গ্রহণ করা এখন একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। মানুষ পাহাড়ী খাবার খেতে চায় ট্রেন্ড হিসেবে, ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে না। কিন্তু এটিকে একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। গণমানুষের কাছে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্যকর আদিবাসী খাবারগুলোকে আরো বেশী প্রচার ও প্রসার করতে হবে।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, শুধুমাত্র আদিবাসীদের খাদ্যভ্যাসের চাকচিক্য দেখলে হবে না, তাদের জন্য ন্যায্য খাদ্য বন্টন করতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত, জাতিনিরপেক্ষ, ভাষানিরপেক্ষ সর্বোপরি একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, এ মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। সবার কাছে আদিবাসীদের অর্গানিক খাদ্যগুলোর পরিচয় করিয়ে দেওয়া। প্রচার বাড়লে, বাজারে এগুলোর প্রচলন বাড়বে। তখন উৎপাদনও বাড়বে।

আলোচনা সভা শেষে পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সদস্য মেজর (অব) তপন বিকাশ চাকমা বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মেলার স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।

মেলায় মারমা ও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী মুন্ডি, গারো ও চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা, পাজনসহ বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক খাবার এবং কলা, বেগুন, মরিচ, পাহাড়ী আলুসহ বিভিন্ন ধরণের কৃষিজ পণ্যর সমাহার বসেছে। দুইদিনব্যাপী (শুক্রবার ও শনিবার) চলা এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা হতে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।

‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরও আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে না’

 


চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরও আদিবাসীসহ নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার পাহাড়িদের অধিকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে না। জুলাই সনদে আদিবাসীদের কথা নেই।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় বক্তারা সব কথা বলেন। মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি এ সভার আয়োজন করে। স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতোর সভাপতিত্বে সদস্য সচিব হিরন মিত্র চাকমা ত্রিজিনাদ চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। কবিতা পাঠ করেন শর্মী চাকমা নিশিহা ত্রিপুরা।

স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন।

সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।

ছাড়া স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ সাইফুর রহমান তপন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা নারীনেত্রী শিরীন হক।  

© all rights reserved - Janajatir Kantho