কাপ্তাই হৃদ সাঁতরে পার হতে গিয়ে আদিবাসী ছাত্র নিখোঁজ

 

নিখোঁজ দীপেন চাকমা। ছবিসংগৃহীত

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে দীপেন চাকমা (১৬) নামের এক আদিবাসী স্কুলছাত্র নিখোঁজ হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি ঘাট এলাকায় সাঁতার কেটে হ্রদ পার হতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে।

নিখোঁজ দীপেন রাঙামাটির রাজদ্বীপ গ্রামের মহেশ্বর চাকমার ছেলে রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

জানা গেছে, আজ সকালে দুই বন্ধুর সঙ্গে রাজবন বিহারে যায় দীপেন চাকমা। পরে বেলা ১১টার দিকে বনবিহার ঘাট থেকে রাজবাড়ি ঘাটে সাঁতার কেটে পার হওয়ার চেষ্টা করে তারা। সময় তার দুই বন্ধু পার হতে পারলেও দীপেন চাকমা তলিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন প্রথমে জাল ফেলে উদ্ধারের চেষ্টা করে। পরে বেলা তিনটার দিকে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস স্থানীয় একটি ডুবুরি দল নিখোঁজ স্কুলছাত্রকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। তিনটি ডুবুরি দল দুই ঘণ্টার চেষ্টায়ও দীপেনের সন্ধান পায়নি। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছিল।

নিখোঁজ দীপেনের বাবা মহেশ্বর চাকমা বলেন, ‘আমার ছেলে সকালে রাজবন বিহারে যায়। সেখান থেকে সাঁতার কেটে বাড়ির কাছে ঘাটে আসতে চেয়েছিল সে। তবে হ্রদে ডুবে নিখোঁজ হয় সে।

দীপেন চাকমা মহেশ্বর চাকমার একমাত্র ছেলে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। 

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মান্নান আনছারী বলেন, ‘নিখোঁজ স্কুলছাত্রকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আমাদের সঙ্গে নৌবাহিনী স্থানীয় ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযানে আছেন। 

কারা হেফাজতে বম জনগোষ্ঠীর ২ জনের মৃত্যু, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

 

লালসাংময় বম  লালত্লেং কিম বম (বাঁ দিক থেকে) ছবি: সংগৃহীত

কারা হেফাজতে লালসাংময় বম এবং লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীসহ ২৩৫ নাগরিক। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে নিরপরাধ বম জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার লালসাংময় বমের মৃত্যুতে আমরা তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ।সন্ত্রাস দমনে নামে বান্দরবানে নির্বিচার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষকে আটক, বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর নারী, শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর কারাবন্দী রাখার তীব্র নিন্দা জানাই।

নিরপরাধ বম নাগরিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্য সন্দেহে বম জাতিগোষ্ঠীর যে কাউকে যখন-তখন গ্রেপ্তার বা হয়রানির নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রীয় নীতির শিকার লালসাংময় বমকে ২০২৩ সালে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল।

পরিবারের অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী নিরপরাধ লালসাংময় বম প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ অবহেলার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে গত ২৯ মে তড়িঘড়ি করে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। অবশেষে ৩১ মে চমেক থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরার আগেই মৃত্যুবরণ করেন কারাবন্দী লালসাংময় বম।

লালসাংময় বমের পরিবারের অভিযোগ অমূলক নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরও একজন বম তরুণ কারা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৫ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আদিবাসী তরুণ লালত্লেং কিম বম বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, ‘বিনা বিচারে এক বছর ধরে লালত্লেং কিমকে বন্দী রাখা হয় এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

কারা হেফাজতে মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত আটক নিরপরাধী বমদের মুক্তিসহ বিবৃতিতে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছেবম জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, হাটবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসার ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা; সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে কেএনএফসহ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা; কেএনএফকে কেন্দ্র করে জাতিগত নিধন, হয়রানি, আটক বন্ধ করা এবং পাহাড় সমতলের সব নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেনগণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা প্রমুখ।

© all rights reserved - Janajatir Kantho