গারো স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে হালুয়াঘাটে বিক্ষোভ

 


ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গারো স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ বিকেল ৪ ঘটিকায় হালুয়াঘাটের উত্তর বাজার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ও গারো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (গাসু) যৌথভাবে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

গাসু কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সতীর্থ চিরানের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিবাল মানখিন। সমাবেশে স্বাগতিক বক্তব্য দেন গাসু হালুয়াঘাট শাখার সদস্য সচিব করমিল রুরাম।

এসময় সমাবেশে বাগাছাস ময়মনসিংহ মহানগরের সভাপতি অনিক রেমা, ছাত্রনেতা তেনজিং দিব্রা, বাগাছাস মধুপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রেমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা গারো কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে আটক আসামীদের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান; যেন পরবর্তীতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না দেখায়।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হালুয়াঘাটে পূজা দেখতে বেরিয়ে এক গারো কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। উপজেলার ২ নং যুগলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রধান আসামি ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ধারা আশ্রমপাড়া এলাকা থেকে প্রধান অভিযুক্ত আবুল বাশারকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে জুগলি ইউনিয়নের নয়াপাগা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হন তাঁর সহযোগী মিলন মিয়া (২১)।

 

গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

 




ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নবম শ্রেণির এক গারো আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার বিকেল ৪টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আদিবাসী ছাত্র যুব সংগঠনসমূহের ব্যানারে সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘পাহাড়ের ঘটনার শিথিল হতে না হতেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের এক গারো কিশোরীকে ধর্ষণ করা হল। আদিবাসী মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দ্বিচারিতা কিংবা বিমাতাসুলভ আচরণ রয়েছে, এগুলো দিন দিন আমাদের হতাশ করে তুলছে।

বাগাছাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক চিসিম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে লাগাতার ধর্ষণের চর্চা চলছে। এই ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেল। সেখানে রাষ্ট্রের যে বিচারহীনতা, বিচারহীন সংস্কৃতি সেটার বহাল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পাহাড়ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সমতলের গারো কিশোরীকে ধর্ষণের শিকার হতে হল। আদিবাসীদের মানুষদের সুরক্ষা দিতে সরকার যে ব্যর্থ এই ঘটনাগুলো সেটির প্রতিফলন।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য অনন্যা দ্রং বলেন, ‘যে জায়গায় গারো তরুণী ধর্ষণের শিকার সেই জায়গা আমার অতি পরিচিত। ছোটকাল থেকেই সেই জায়গা দিয়ে আমি হেঁটে এসেছি। অপরাধীদের আমি দেখে এসেছি। আজ হঠাৎ তারা অপরিচিত হয়ে গেল। তার কারণ দীর্ঘদিনের বিচারহীন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার।

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সভাপতি অলিক মৃ বলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশের আদিবাসী নারীরা এই দেশে জন্মেছেন একমাত্র ধর্ষণের শিকার হবার জন্য। একটি ঘটনার সুরাহা হতে না হতেই যে ঘটনা ঘটানো হল আমি এজন্য ধিক্কার জানাই।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, ‘আদিবাসীদের উপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বিচার চেয়ে আমরা বারবার রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাচ্ছি। গত এক মাস ধরে শাহবাগের রাজপথে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার বোনের সম্ভ্রহানির সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখন আর প্রতিবাদের সময় নয়, এখন সময় প্রতিরোধের।’

এছাড়াও বিক্ষোভ সমাবেশে পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিকোলাস চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নারী বিষয়ক সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, গাসু কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক জানকি চিসিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  

প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হালুয়াঘাটে পূজা দেখতে বেরিয়ে এক গারো কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। উপজেলার ২ নং যুগলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রধান আসামি ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ধারা আশ্রমপাড়া এলাকা থেকে প্রধান অভিযুক্ত আবুল বাশারকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে জুগলি ইউনিয়নের নয়াপাগা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হন তাঁর সহযোগী মিলন মিয়া (২১)।

চিকিৎসকেরা সেই আদিবাসী কিশোরীকে ‘ধর্ষণের আলামত’ পায়নি, মনগড়া আখ্যা আদিবাসীদের

 


খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরীর মেডিকেল রির্পোটে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদের কাছে তারা প্রতিবেদন জমা দেন।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের কাছে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ধর্ষণের পরীক্ষার ১০টি সূচকের সব কটিতে স্বাভাবিক লেখা রয়েছে। এর অর্থ ধর্ষণের কোনো আলামত নেই।

ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. জয়া চাকমা। তিন সদস্যের টিমে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মোশারফ হোসেন নাহিদা আক্তার ছিলেন।

গণমাধ্যমকে জয়া চাকমা বলেন, ‘আমরা মেডিকেলে রির্পোট জমা দিয়েছি। সব পরীক্ষানিরীক্ষা করেছি। কিন্তু আসলে ধর্ষণের কোন আলামত পাইনি।’ 

এদিকে, সিঙ্গীনালার আদিবাসী কিশোরীর ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টকে মনগড়া বলছেন আদিবাসী নেতারা। জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র কৃপায়ন ত্রিপুরা বলেন, ‘এটি সরকারের একটি পরিকল্পিত মনগড়া প্রতিবেদন, আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের পরীক্ষার প্রতিবেদন এত দ্রুত কখনো দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। আর বিভিন্নজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে ভুক্তভোগী কিশোরীর ছবি দিচ্ছেন, এটিও একটি অপরাধ। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অলিক মৃ বলেন, ‘তনুমুনিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট কেমন ছিল? মনে আছে? ঠিক খাগড়াছড়ির ধর্ষণের রিপোর্টও সেভাবে আসছে।

আইনজীবী সায়ক চাকমা বলেন, ‘যদি বিশ্বাস রাখি যে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে, সেক্ষেত্রে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি হয় নাই, নিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট হবে। আর এই রিপোর্ট প্রথমে যাবে তদন্তকারী সংস্থার কাছে। কিন্তু তা না করে এই রিপোর্ট প্রথমেই গিয়েছে সাংবাদিকদের কাছে। এইসূত্রে মেডিকেল রিপোর্টটি স্বাভাবিকভাবেই তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।

যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘রিপোর্টটি দেখিয়ে যারা বলার চেষ্টা করছেন, যে ঘটনা আদৌ ঘটে নাই, তারা স্পষ্ট এবং সচেতনভাবেই মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ঘটনাটিকে ভুয়া প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। এর মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা যে আসলেই ঘটেছে, সেটাই প্রতীয়মান হয়।

এরআগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অজ্ঞাত তিন আসামির বিরুদ্ধে আদিবাসী কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। পরে এই ঘটনায় শয়ন শীল নামে এক তরুণকে আটক করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। অন্য দুই আসামি গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধে সহিংসতা মারা যায় জন। খাগড়াছড়িতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।

© all rights reserved - Janajatir Kantho