আঞ্চলিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আঞ্চলিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

তাড়াশে আদিবাসী সুফলভোগীদের পুকুর দখলের অভিযোগ

 

ছবি: কালবেলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আদিবাসী সুফলভোগীদের পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এর প্রতিকার চেয়ে তাড়াশ ইউএনও সুইচিং মং মারমা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বটগাড়ী সপ্তমী পুকুর সুফলভোগী দলের সভাপতি বলরাম উরাওঁ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল বটগাড়ি সপ্তমী পুকুরটি নিমগাছি মৎস্য চাষ প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগী সদস্যরা ২০১১ সাল থেকে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বটগাড়ি এলাকার প্রভাবশালী মো. সাইফুল ইসলাম ও তার তিন ছেলে মো. আমজাদ হোসেন, মো. শামিম হোসেন, মো. আমিরুল ইসলাম, সাইফুলের ছেলে মো. শফি ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মো. রাঙ্গা ওই জলাশয়ে জাল কাগজ করে পুকুরটি নিজেদের মালিকানা দাবি করে তা দখলের চেষ্টা করেছেন।

সুফলভোগী অমল উরাওঁ, চিত্তরঞ্জন উরাওঁ, প্রদীপ উরাওঁ জানান, বর্তমানে লিজ দেওয়া পুকুরে মাছের খাবার, ওষুধ ও পরিচর্যা করতে দিচ্ছে না। বরং প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক পুকুরে থাকা সুফলভোগীদের চাষ করা প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ তুলে বিক্রি করেছেন। এ সময় বাধা দিলে প্রভাবশালীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ ছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

তাড়াশ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তমীর পুকুরটি ‘খ তপশিল গেজেট থেকে তা অবমুক্ত করার জন্য আব্দুল কুদ্দুসগং তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন। আবেদেনের প্রেক্ষিতে গত ২৮ মার্চ তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা খালিদ হাসান স্বাক্ষরিত একটি আদেশপত্রে বটগাড়ি মৌজার আরএস ২৪ নম্বর খতিয়ানটি টেম্পারিং খতিয়ান। নালিশি ভূমিতে আবেদনকারীদের কোনো ভোগদখল নাই। টেম্পারিং খতিয়ান হিসেবে নালিশি ভূমিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত থাকায় কুদ্দুসগংদের অবমুক্ত করা আবেদনটি বাতিল করা হয়। তারপরও ওই প্রভাবশালীরা সুফলভোগীদের পুকুরটি দখলে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে তাড়াশ ইউএনও সুইচিং মং মারমা বলেন, খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘শেরপুরে চিহ্নিত গোষ্ঠী আদিবাসীদের হামলা করে লুটপাট করছে’


বগুড়ার শেরপুরে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী আদিবাসীদের উপর হামলা করে লুটপাট করছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আদিবাসীদের জান মালের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে শেরপুর উপজেলা আদিবাসী সমন্বয় কমিটি। আজ বুধবার সকালে পৌর শহরের পৌর শিশুপার্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমন্বয় কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং বাবু। তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা আদিবাসীরা দেড়শ বছরের অধিক সময় ধরে বসবাস করছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কৃষি ও মজুর খেটে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু আপনারা লক্ষ্য করেছেন অনেক দিন ধরেই আমাদের উপর চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠী হামলা করে লুটপাট করছে।

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আদিবাসীদের ওপর ২০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, আবাদি জমি ও পুকুর দখল, শ্মশান ও কালী মন্দির ভাঙচুর এবং শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে এ পর্যন্ত শেরপুর থানা-পুলিশের কাছে অন্তত ২০টি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তিনটি অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করলেও পুলিশ কাউকে আটক করেনি।

একই ব্যক্তিরা গত ৬ মার্চ আদিবাসী নেতা ও ভবানীপুরের ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার সরকারের বাড়িতে প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে হামলা চালিয়ে ৯ বিষা পুকুরের মাছ লুটে নেয়। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও দুই মাস ধরে তিনি ঘর ছাড়া। এর মধ্যেই গত ২ মে তার জমি থেকে সশস্ত্র অবস্থায় ধান কেটে নেওয়া হয়েছে। থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমাদের অভিযোগ গুলোতে কয়েকজন ব্যক্তির নাম বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে কিন্তু তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবি সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আদিবাসীদের উপর হামলা ও সম্পদ লুটপাটকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার কর, আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মালা প্রত্যাহার কর, জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে, ২০১৮ সালের গঠিত তদন্ত কমিটির চিহ্নিত খাস জমি, পুকুর ও দেবত্তোর সম্পত্তি আদিবাসীদের বন্দোবস্ত দিতে হবে।

দাবি আদায়ের জন্য আগামী ১৩ মে সোমবার সকাল ১১ টায় শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে উপজেলার আদিবাসীরা। 

তিতুমীর কলেজের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন (তালিকাসহ)

আদিবাসী ছাত্র সংগঠন
সভাপতি থুইচিং প্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক বিংশ দিব্রা (বাঁ দিক থেকে)

সরকারি তিতুমীর কলেজের আদিবাসী ছাত্র সংগঠন-এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (৬ মে), তৃতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করা হয়।

কাউন্সিলে আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মনিষা ম্রং ও সাধারণ সম্পাদক থুইচিংপ্রু মারমার সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বাংলাদেশের আদিবাসীদের ইতিহাস তুলে ধরেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সহ-সভাপতি যোহন দিও সংগঠনের ইতিহাস তুলে ধরেন। সাধারণ সম্পাদক থুইচিং প্রু মারমা বিগত কমিটির সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প তুলে ধরেন।

এছাড়াও সংগঠনটির উপদেষ্টা অভিভাবক কল্যাণ মারমা বক্তব্য রাখেন। তিনি সংগঠনকে একতার সাথে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকার আহবান জানান।

তৃতীয় কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে থুইচিংপ্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিংশ দিব্রা ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ইমেজ চাকমা নির্বাচিত হন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা-


গঠিত কমিটির মেয়াদ এক বছর। 

 

সাজেকে গুলিবিদ্ধ সেই ত্রিপুরা শিশু মারা গেছে

ত্রিপুরা শিশু


রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ শিশু রোমিও ত্রিপুরা (৭) মারা গেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম গন্ডছড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে রোমিও ত্রিপুরা তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় সে মারা যায়।

রোমিও ত্রিপুরার বাবা ফবেন ত্রিপুরা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে রাত ১১ টায় চিকিৎসকরা তাকে পিআইসিইউতে রেফার করে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিইউতে কোনো সিট খালি না থাকায় তাকে সেখানে থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক লাইফ সাপোর্ট দিতে বলে। কিন্তু ডেন্টাল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট না থাকায় সেখানে থেকে এশিয়ান হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই ছেলেটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার শিশু রোমিও ত্রিপুরার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: একই পদে লড়ছেন দুই গারো নারী

যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের শালবন পরিবেষ্টিত মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একই পদে লড়ছেন গারো জনগোষ্ঠীর দুইজন নারী। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুইজন হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং। দুইজনেই মধুপুর গড় এলাকার বেরিবাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা।

একই পদে গারো জনগোষ্ঠীর দুইজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। সেই সঙ্গে ভাগ হয়ে গেছেন ওই সব এলাকার ভোটাররা।

মধুপুর পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মধুপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার আদিবাসী ভোটার রয়েছেন।

জানা গেছে, মধুপুর গড় এলাকার অরণখোলা, বেরিবাইদ, কুড়াগাছা, ফুলবাগচালা, শোলাকুড়া ও আউশনাড়া ইউনিয়নে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে এসব এলাকায়। দুই প্রার্থীই নিজ জাতির ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা ও সমর্থনের জন্য যাচ্ছেন। গারো জাতিগোষ্ঠীর ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মধুপুর অঞ্চলের প্রবীন আদিবাসী নেতা অজয় এ মৃ বলেন, আদিবাসীদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় গারোদের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে, যা উভয় প্রার্থীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এর আগে যষ্ঠিনা নকরেক ২০০৯ সালে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সন্ধ্যা সিমসাং ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যাওয়া গারো নেতা চলেশ রিছিলের স্ত্রী। তিনি প্রথমবারের মতো প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে, যষ্টিনা নকরেক লড়ছেন ফুটবল প্রতীক নিয়ে।

 

রাঙ্গামাটিতে আটক তিন ছাত্রনেতার মুক্তির দাবি পিসিপি’র


রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে সেনাসদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) তিন ছাত্রনেতাকে আটকের প্রতিবাদ ও দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিসিপি এ দাবি জানায়।

পিসিপি’র তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ মে জুরাছড়ি উপজেলা সদরস্থ যক্ষা বাজার সেনাক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়। এ ঘটনায় পিসিপি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে আটককৃত ছাত্রনেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

পিসিপির জুরাছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুপম চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেন চাকমা ও তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রনি চাকমা আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুরেশ কুমার চাকমার নির্বাচনী প্রচারণার কার্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় সেনা গোয়েন্দা রবিউল সুরেন চাকমার হাতে নিষিদ্ধ ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকানো একটি মানিব্যাগ দেয় এবং বলে সামনে আমাদের লোক আছে তার হাতে দিয়ে দিও।

তারপর কিছুদূর যেতে না যেতে সেনাবাহিনীর একটি দল জুরাছড়ি সদর এলাকার ধামাইপাড়া সেতু থেকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে তাকে যক্ষা বাজার সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর একই চেকপোস্ট থেকে নির্বাচন থেকে বাড়ি ফেরার পথে রূপম চাকমা ও রনি চাকমাকে আটক করে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়।

পিসিপি’র অভিযোগ, সেনাসদস্যরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ছাত্রনেতাদের ইয়াবা ট্যাবলেট ও চাঁদার রশিদ গুঁজে দিয়ে ছবি তুলে গতকাল জুরাছড়ি থানায় সোপর্দ করেছে। জুরাছড়ি থানা তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইন ও চাঁদাবাজির আইনে মামলা দিয়েছে।

সেনাবাহিনী কর্তৃক তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটক ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পিসিপি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। একইসাথে আটককৃত তিন ছাত্রনেতার দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। 

‘কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে অনেকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা’

কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে বিভ্রান্তি

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে দুর্বৃত্তরা অনেকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বাঙালিদের মতো পাহাড়িরাও অনেকে গুজব খেকো, বিভ্রান্ত হয়। অপহরণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র করে। যারা চক্রান্তকারী এবং জনগণের শত্রু তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নানাভাবে কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে মিথ্যাচার করে।

আজ শনিবার (৪ মে) কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরে গণবিক্ষোভ ও বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের জুতাপেটা-কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচিতে পাহাড়ি নারী নেত্রীরা এসব কথা বলেন। পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত দুই নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এ কর্মসূচি পালন করে।

সকাল ৯টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকা থেকে ৩০০ জনের অধিক একটি দল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে অবস্থান নেয়। একই সময়ে রাঙামাটি-মহালছড়ি-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড়ের দিক থেকেও স্লোগান দিতে দিতে মিছিলকারীদের দল চেঙ্গী ব্রীজ দিয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছায়।

দীঘিনালা-সাজেক থেকেও প্রতিবাদী নারীদের মিছিল খাগড়াছড়ি প্রধান সড়ক দিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে এসে মিলিত হয়। সেখানে এক বড় সমাবেশে রূপ নেয়।

মিছিলকারীরা অপরাধীদের প্রতীকী হিসেবে কুশপুত্তলিকাও বহন করে আনে। মিছিল ও সমাবেশ থেকে ‘অপরাধীদের রক্ষার রায় মানি না’, ‘অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার চাই’, ‘বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীরা হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।

সভায় কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা নিয়ে প্রশাসনের গড়িমসিতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। সমাবেশের এক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের প্রতিকৃতিতে জুতা পেটা ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

সভাপতির বক্তব্যে কণিকা দেওয়ান বলেন, বিচারের নামে প্রহসনের রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তথা নারী সমাজ মেনে নেবে না। কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, ‘কল্পনা তো সাধারণ ছিলেন না। তিনি সংগ্রামী আদর্শে বিশ্বাসী এক রাজনৈতিক কর্মী। কেন তিনি প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবেন? ষড়যন্ত্রকারীরা বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এরকম গুজব রটায়। ফলে তাদের অপপ্রচারণায় আমাদের মধ্যেও দুর্বলচিত্ত কারোর কারোর দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।’

নীতি চাকমা দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘কল্পনা অপহরণ মামলা যে খারিজ করে দেয়া হলো, এটি আমরা মানি না। কল্পনার সন্ধান করতে গিয়ে সমর-সুকেশ-মনোতোষ গুমের শিকার হয়েছে। রূপন আত্মাহুতি দিয়েছে; আমরা তাদের স্যালুট করি। যদি সাহসের সাথে আত্মবলিদানকারী কোনো সহযোদ্ধার নাম বলি, তাহলে প্রথম সারিতে রূপনের নাম আসবে ইতিহাসে। বীরত্বের সাথে বোনের সন্ধান করতে জীবন উৎসর্গ করেছে সে।

নারী নেত্রী নীতি চাকমা সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কোন দেশে বসবাস করছি, স্বাধীন দেশে বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। ১৯৯৬ সালে ১২ জুনে নিজের বাড়িতে বিনা অনুমতিতে একজন ঘুমন্ত মানুষকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে অপহরণ করে, এখনও তার কোনো হদিস নেই। প্রশাসন এতো টালবাহানা করে যে, তাঁর ভাইয়েরা মামলা করতে গেলে সাধারণ জিডি নিতেও প্রশাসন নিতে চায়নি।’

সমাবেশ থেকে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহাড় থেকে সেনা-সেটেলার প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। 

গ্রীষ্মের তাপদাহে পাহাড়ে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

পাহাড়ে পানির অভাব

গ্রীষ্মের তাপদাহে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। অনাবৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। পানির সংকটে হা-হুতাশ করছেন পার্বত্যবাসী।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের চিম্বুক সড়কের গেৎশিমানী বম পাড়ার বাসিন্দারা চার ফুটের মতো মাটি খুঁড়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। পাড়ার প্রায় ৮০টি পরিবার এ পানির উপর নির্ভরশীল। দৈনন্দিন নানা কাজের পাশাপাশি এ পানি পান করা হয়। একজনের পর আরেকজন সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু এ পানি পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

তীব্র পানির সংকটে চিম্বুক পাহাড়ের কোরাং বাজার এলাকায় পানি বিতরণ করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এ এলাকায় ম্রো জনজাতির ২১০টি পরিবারের বসবাস রয়েছে।

পানির জন্য হাহাকারের এ চিত্র কেবল বান্দরবানেই নয়। অনাবৃষ্টির ফলে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক ছড়া শুকিয়ে গেছে। উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের শিলছড়ি ছড়া, ভেলাপ্পা পাড়া ছড়া এবং ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ডের জামাইছড়ি এলাকার ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন হাজারও এলাকাবাসী।

কিছু কিছু এলাকায় গভীর নলকুপ থাকলেও ছড়ায় পানি না থাকায় পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। ফলে নলকূপেও পানি উঠছে না। এতে করে নদী হতে খাবার পানি এবং ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করে এলাকাবাসীকে নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি কাজ সারতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, সাধারণত মার্চ থেকে জুনের আগপর্যন্ত ছড়াগুলোতে পানি থাকে না; থাকলেও অল্প। তবে চলতি বছরের অবস্থা ভয়াবহ। দাবদাহে ছড়াগুলো পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। এতে পাহাড় সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পানির জন্য এই হাহাকার নিয়ে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পাহাড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বন উজাড়ের কারণে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। যার কারণে পানির উৎসও কমে গেছে। এ ছাড়া পাহাড় থেকে পাথর তোলা ও পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ধ্বংস করায় দুর্গম এলাকাগুলোতে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। 

রাঙ্গামাটি বারের সম্পাদক হলেন রাজিব চাকমা

চাকমা

উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হল রাঙ্গামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ নির্বাচন চলে বিকাল তিনটা পর্যন্ত।

নির্বাচনে আবারও সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন এডভোকেট রাজিব চাকমা।

ভোট গণনা শেষে বিকাল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন বারের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত এডভোকেট মিহির বরণ চাকমা।

এ সময় সরকারি নির্বাচন কমিশন হিসেবে দায়িত্বরত এডভোকেট ফরহাদ চৌধুরী ও এডভোকেট জীবন বিকাশ চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া রাঙ্গামাটি আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অন্যান্যদের মধ্যে কোষাধক্ষ্য পদে দর্শন চাকমা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে এডভোকেট মামুন ভূঁইয়া নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সহ-সভাপতি পদে মাকসুদা হক ও সুস্মিতা চাকমা। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট মিলন চাকমা, পাঠাগার সম্পাদক হিসেবে শ্রীজ্ঞানী চাকমা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

 

অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু হাইমংসিং মারমার

অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু হাইমংসিং মারমার

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচিতে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাইমংসিং মারমা নামের একজন ১০ বছর বয়সী শিশু। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না অসহায় পরিবার।

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটি থানচি সদরে আপ্রুমং পাড়ার বাসিন্দা হ্লামংচিং মারমা এর ছেলে। সে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া করে।

শিশুটির পরিবার জানায়, হাইমংসিং এর শরীরে অদৃশ্য এক রোগ বাসা বেঁধেছে। তার পিঠে তৈলাক্ত মাংসের জমাট ফোলে ছোট থেকে বড় আকারে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। মেরুদণ্ডও বেঁকে গেছে। বর্তমানে সে স্পষ্ট বুঝতে পারে যে, সে বিরল এক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খেলা কিংবা হাঁটতে গেলে ব্যথা অনুভব করতে পারে।

তার মা নুমেসিং বলেন, আমার ছেলের জন্মগতভাবে শরীরের চামড়ায় কালো দাগ ছিল, কিন্তু তৈলাক্ত মাংসের জমাট ছিল না। প্রায় ২ বছরের মাথায় পিঠে ছোট ছোট রক্ত  শক্তের মতো জমাট শুরু করে। দীর্ঘদিন পরে অর্থাৎ ৯ বছরে এসে ছোট থেকে বড় হতে শুরু হয়। সেটি চলতি বছরের ছোট জমাট তৈলাক্ত মাংসের বড় আকারে ধারণ করে মেরুদণ্ড হাঁড় পর্যন্ত বেঁকে গেছে।

শিশুর বাবা হ্লামংচিং মারমা বলেন, আমার ছেলে বিরল এক রোগে খুবই কষ্টের দিন কাটাচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছি না। ছেলের চিকিৎসার জন্য দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও মানবিক সংস্থাসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান তিনি। 

কাঁচালং নদীতে নিখোঁজ আদিবাসী শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

কাঁচালং নদী

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের কাঁচালং নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে স্থানীয়দের সহায়তায় ভাসমান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে শনিবার বেলা ২টার দিকে গঙ্গারাম এলাকায় কাচালং নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় শিশুটি।

গঙ্গারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল জয়ন্তী। সে গঙ্গারাম এলাকার মিসন চাকমার মেয়ে।

সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় মায়ের সঙ্গে কাচাঁলং নদীতে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় জয়ন্তী। খবর পেয়ে স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুজি করলেও তার সন্ধান মেলেনি। পরে রোববার ভোরে মরদেহ নদীর ঘাটে ভেসে উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) শিরীন আক্তার শিশু জয়ন্তীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন এবং তার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের উৎসাহিত করা হয়েছে

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। আজ এক যৌথ বিবৃতি সংগঠন দুটি এ প্রতিবাদ নিন্দা জানায়।

পিসিপির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রেরিত সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ রাঙ্গামাটির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তা কর্তৃক পাহাড়ের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি খারিজের আদেশ দেয়া হয়। কল্পনা চাকমার অপহরণে চিহ্নিত অপরাধীদের দায়মুক্তি দিতে আদালতের এই আদেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মামলা চলার পরও অপহৃত কল্পনা চাকমার হদিশ দিতে না পারা ও অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস এবং ভিডিপি সদস্য নূরুল হক ও সালেহ আহমেদকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে না পারা প্রশাসন ও বিচার বিভাগ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ না করে উল্টো অপরাধীদের দায়মুক্তি দিতে প্রশাসনের অপতৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। মামলাটি খারিজের মধ্যে দিয়ে প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান বিচারহীনতার এক চরম দৃষ্টান্ত প্রদর্শন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের উৎসাহিত করেছে।

পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন আরও মনে করে, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের এ ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ পার্বত্য চট্টগামের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতিকে সংকটাপন্ন করে তুলবে। তাই প্রশাসন ও বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছে তারা। 

বান্দরবানে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি

বান্দরবানে গণগ্রেপ্তার বম

বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিসত্তার সাধারণ নাগরিকদের গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ রবিবার ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনসমূহ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

বাঘাছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী এলাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।

এতে পিসিপি’র বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি কিরণ চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সত্য চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পদাক নিকেল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য অপর্ণা চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে নাটকীয় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের নামে সেখানকার বম জাতিসত্তার সাধারণ জনগণকে গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।

সমাবেশে জানানো হয়, ইতোমধ্যে সেখানে অন্তত ৭০ জন নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী ও গর্ভবর্তী নারীও রয়েছেন। শুধু তাই নয়, সেখানকার জনগণকে ৫ কেজির অধিক চাল কেনা ও বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত গ্রামবাসীরা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে বান্দরবানে যৌথ অভিযানের নামে গণগ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা এবং গ্রেপ্তারকৃত সাধারণ গ্রামবাসীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।

একই দাবিতে দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই তিন সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্বামীসহ আদিবাসী নারীর হাত ভেঙ্গে দিল দুর্বৃত্তরা

আদিবাসী নারী ধর্ষণ

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্বামীসহ এক আদিবাসী নারীর হাত ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নের রেমা কালেঙ্গারে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তারা চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার দুইদিন পার হলেও এ ঘটনায় এখনো থানায় মামলা হয়নি। মামলা না দিতে এক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা খলিল মিয়া ও তার বাহিনী ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাওয়ায় পথে একই এলাকার ইউপি সদস্য খলিল মিয়ার ভাতিজা মেহেরুল্লার ছেলে মারুফ মিয়া ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে এমতাজ মিয়া ওই নারীর গতিরোধ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা মহিলাটির গালে মুখে কামড়ানো ছাড়াও শারীরিকভাবে শ্লীলতাহানি করে এবং পিটিয়ে তার হাত ভেঙে দেয়।

এ সময় তার চিৎকারে স্বামী এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা রাতে তাদের উদ্ধার করে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্ত দেববর্মা, সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জনক দেববর্মা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দুর্বৃত্তদের বিচার দাবি করেছেন। তারা চুনারুঘাট থানায় মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। 

আদিবাসী যুবককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৬

আদিবাসী যুবক

ঝিনাইদহে স্বাধীন বিশ্বাস নামের এক আদিবাসী যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র‌্যাব এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন সজীব বিশ্বাস (২০), বিজয় বিশ্বাস (১৮), সুশান্ত বিশ্বাস (৩৫), সুভাষ বিশ্বাস (৪০), প্রসেনজিৎ বিশ্বাস (২৬), পলাশ বিশ্বাস (১৬)। আসামিদের প্রত্যকের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগরে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঝিনাইদহ র‌্যাব কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাইম আহমেদ জানান, ১৪ এপ্রিল রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের ভগবাননগর গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুপক্ষের মধ্যে চড়ক পুঁজা অনুষ্ঠান নিয়ে তর্কাতর্কি হতে থাকে।

এক পর্যায়ে ওই গ্রামের অতুল বিশ্বাসের ছেলে রিপন বিশ্বাস ও পুতুল বিশ্বাসের ছেলে শিপন বিশ্বাস লাঠি দিয়ে নিহত স্বাধীন বিশ্বাস ও তার বাবা সুনিল বিশ্বাসের উপর চড়াও হয় এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে।

এতে স্বাধীন বিশ্বাসের মাথায় লাঠির আঘাত লাগলে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায়। এই ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু, চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত

সাংগ্রাই উৎসব কি

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হল মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই। এ উপলক্ষে বান্দরবান শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজারমাঠ এলাকা থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন।

শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী সবাইকে বাংলা নববর্ষ ও সাংগ্রাই-এর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বান্দরবানে সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব সবকিছুই আছে। তাই পরিবেশের প্রশ্ন তোলার কোনো প্রয়োজন নেই।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী, পৌর মেয়র মো. শামসুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ প্রমুখ।

শোভাযাত্রার পরে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বয়স্ক পূজার মধ্য দিয়ে সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সম্মান জানানো হয়।

এবারের উৎসবের স্লোগান ‘প্রতিটি ফোঁটা-ই হোক শান্তির দূত, পৃথিবী হোক শান্তিময় জলধারা। এ উৎসব আজ ১৩ এপ্রিল শুরু হয়ে চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। মৈত্রী পানি বর্ষণ এবং নানা খেলাধুলার মাধ্যমে এই মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসবের শেষ হবে। 

নদীতে ফুল ভাসিয়ে চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যাদের বিজু-বিষু উৎসব শুরু

বিজু-বিষু উৎসব

নদী-হ্রদে ফুল ভাসিয়ে ‘ফুল বিজু উদযাপন শুরু হয়েছে তিন পার্বত্য জেলায়। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হল চাকমা জনগোষ্ঠীর তিন দিনের প্রাণের বিজু উৎসব।

পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই, ম্রোরা চানক্রান, খিয়াংরা সাংগ্রান, খুমিরা সাংক্রাই ও তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু উৎসব পালন করে।

ফুল বিজুতে সম্মিলিত হয়ে সকালে চাকমা ছেলে-মেয়েরা নদী-হ্রদে ফুল দিয়ে মা গঙ্গাকে পূজা করেন। পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এ সময় তারা সবার মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন।

এ উৎসবে চাকমারা বিভিন্ন প্রকারের সবজি দিয়ে পাজন নামের একটা তরকারি রান্না করে। এটা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।

উৎসবে নতুন কাপড় পরিধান করে দলবেঁধে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ায় তরুণ-তরুণীরা। তাছাড়া সাধ্য অনুসারে ঘরে ঘরে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করে বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি কারোর সঙ্গে অতীতে বৈরিতা বা ঝগড়া, মনোমালিন্য থাকলেও এদিন সবাই ভুলে গিয়ে একে অপরকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে পিঠাসহ হরেক রকম খাবার পরিবেশন করে।

তিন পার্বত্য জেলায় ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, যা দেশের অন্য কোনো জেলায় নেই। এগারোটি জাতিসত্তার নানা বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, সংস্কৃতির সম্মিলন উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। 

কেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক বদলি

নাথান বমের স্ত্রী

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বমের স্ত্রী নার্স লাল সমকিম বমকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, নার্সিং সেবা-১ শাখার গত ৮ এপ্রিল এক স্মারকের আলোকে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স লাল সমকিমকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলির আদেশ দেওয়া হয়।

একই চিঠিতে, একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নার্স দীপালী বাড়ৈ নামে আরও এক নার্সকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।

পরিপত্রে জানানো হয়, বদলিকৃত সিনিয়র নার্সরা ৯ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে আবশ্যিকভাবে যোগদান করবেন, নাহলে ৯ এপ্রিল তারিখের অপরাহ্নে স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য করা হবে।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক লাল সমকিম ও দীপালী বাড়ৈ নামে দুই নার্সকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

লোগাং গণহত্যা দিবস আজ: পাহাড়িদের বর্ষবরণের আনন্দ যেদিন মহাশোকে পরিণত হয়

লোগাং গণহত্যা দিবস

আজ লোগাং গণহত্যা দিবস। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ কালো দিন। ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল যখন পুরো পার্বত্য এলাকায় বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসবে বিরাজ করছে আনন্দমুখর পরিবেশ; তখন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং এলাকায় সংঘটিত হয় এক নৃশংস গণহত্যা। যা স্থানীয়, জাতীয় পরিসর ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিতি পায় ‘লোগাং গণহত্যা’ নামে।

সেদিন (১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন বসতিস্থাপনকারী সেটেলার বাঙালীরা তাদের একজন রাখাল বালককে শান্তিবাহিনী হত্যা করেছে এমন অভিযোগ তুলে আদিবাসীদের উপর আক্রমন করে। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

সেটলাররা ধারালো দা, বটি, কুড়াল দিয়ে নিরীহ আদিবাসীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ হত্যাকাণ্ডে শিশু, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ, নর-নারী কেউ রেহায় পায়নি। দুই শতাধিক পাহাড়ি আদিবাসী মারা যায়, অনেকেই নিখোঁজ হন। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয় প্রায় ৭ শ’র বেশি জুম্মদের বাড়িঘর।

এ ঘটনায় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসবের আনন্দ মুহূর্তে মহাশোকে পরিণত হয়। ১৩ এপ্রিল যেদিন উৎসবে মেতে ওঠার কথা সেদিন খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ হয়।

সেটেলার বাঙালিরা শান্তিবাহিনী কর্তৃক রাখাল বালককে মেরে ফেলার যে অভিযোগ তুলেছিল, তৎসময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, সেদিন কোন রাখাল বালকের লাশ পাওয়া যায়নি; পাওয়া যায়নি কোন খুনের আলামত।

প্রগতিশীল অনেক লেখক-সাংবাদিকের মতে, এটা ছিল আদিবাসীদের নিজভূমি থেকে বাস্তচ্যুত করার নীলনকশা। যে নীলনকশা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে লোগাং গুচ্ছগ্রামের আদিবাসীদের উপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

এ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ১২ ও ১৪ এপ্রিল শোক সভা পালন করে। গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসব বর্জন করা হয়।

লোগাং গণহত্যার ৩২ বছর কেটে গেছে অথচ আজো পার্বত্য চট্টগামের আদিবাসী জনগণ এ গণহত্যার বিচার পায়নি। আদৌ এ গণহত্যার বিচার হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে আদিবাসীদের মনে। 

পাহাড়ের ওষুধ দোকানিরা মাথাব্যথায়ও দেন অ্যান্টিবায়োটিক

পাহাড়ের ওষুধ দোকানিরা মাথাব্যথায়ও দেন অ্যান্টিবায়োটিক

সামান্য মাথাব্যথার জন্যও অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তিন পার্বত্য জেলার ওষুধের দোকানিরা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল বিএমজে ওপেন–এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ ভাগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন।

গবেষণা দলে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান মান্নান, নাইম উদ্দিন হাসান চৌধুরী, তানভীর এহসান ও গবেষক কল্যাণ চাকমা; রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক গৌরব দেওয়ান; চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষক মাসুদ রানা; চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এইচ এম হামিদুল্লাহ; এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অধ্যাপক নাজমুল আলম ও অয়ন সাহা; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমজাদ হোসেন ও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের জান্নাতুন উনাইজা।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত পার্বত্য এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রবন্ধটি বিএমজে ওপেন–এ প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় জানানো হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সাধারণ জ্বর, কাশি, সর্দি—এসব রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছে পাহাড়ি লোকজন। এজিথ্রোমাইসিন ও এমোক্সিসিলিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই জনগোষ্ঠীর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতাও হারাবে।

গবেষণার জন্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১ হাজার ৩৩৬ জন নারী ও পুরুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতি দুজনের একজন অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেছেন।

এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের পেছনে চারটি কারণ বের হয়ে এসেছে। ১. দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের দূরত্বের কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যাওয়া, ২. চিকিৎসা খরচ নির্বাহে আর্থিক অসচ্ছলতা, ৩. নিকটস্থ ওষুধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কিংবা নিকট সম্পর্কের কারোর পরামর্শে কেনা এবং ৪. চিকিৎসকের পুরোনো ব্যবস্থাপত্র দেখে অ্যান্টিবায়োটিক কেনা।

গবেষক আদনান মান্নান বলেন, সমতলের তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের হার বেশি। এমনকি মাথাব্যথার জন্য প্রায় ১৪ ভাগ পাহাড়ি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথচ মাথাব্যথার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরাও দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।

গবেষকেরা বলছেন, পাহাড়িরা দীর্ঘদিন ধরে নিজস্ব চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছেন। অর্থাৎ বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করেছেন। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে নিজস্ব পদ্ধতি কাজ না–ও করতে পারে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও তদারকি বেশি প্রয়োজন। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho